মাদারীপুর জেলার সবগুলো স্লুইস গেট অকেজো হয়ে অবহেলায় পড়ে আছে। পাশাপাশি স্লুইস গেটের যন্ত্রপাতিও চুরি হয়ে গেছে। ফলে কোনো কাজে আসছে না এসব গেট। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর, রাজৈর, কালকিনি, শিবচর, ডাসার উপজেলায় কাগজ কলমে ১৭টি নদনদী রয়েছে। তবে জেলায় দৃশ্যমান আছে ১০টি নদনদী। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পদ্মা, পালরদী, আড়িয়াল খাঁ, ময়নাকাটা, বিষারকান্দি, কুমার নদ। এগুলোকে ঘিরে মাদারীপুরের ৫টি উপজেলায় ৩৪টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৯টি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ৫টি থাকলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার এসব সম্পদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের মস্তফাপুরের কুমার নদের ওপর নির্মাণ করা হয় একটি স্লুইস গেট। এটি ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় পলি পড়ে পুরোপুরি ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে গেটটি। জলকপাটের পুরো অংশই মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও এর চারপাশ লতাপাতায় ভরে গেছে। ফলে পানি প্রবাহও বন্ধ হয়ে গেছে। একই ইউনিয়নের চোকদার ব্রিজের পাশে আছে আরেকটি স্লুইস গেট। এছাড়াও মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের কুলপদ্বি এলাকার ও একই উপজেলার চরমুগরিয়া এলাকার কুমার পল্লীর পাশের স্লুইস গেটগুলোরও একই অবস্থা। এছাড়া এইসব স্লুইস গেটের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। এছাড়াও অনেক জায়গায় নদ-নদী গতিপথ পরিবর্তন করায় এই স্লুইস গেটগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
এগুলো অকেজো হওয়ার কারণে জেলার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা চাহিদা অনুযায়ী পানি ব্যবহার করতে পারছেন না।
মস্তফাপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, মস্তফাপুরে যে স্লুইস গেটটি আছে, তা বহু বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এটি সচল থাকলে এই গ্রামের মানুষের অনেক কাজে আসতো। কৃষিকাজে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পানি কাজে লাগাতে পারতাম। এখন এটি কোনো কাজেই আসছে না।
- আরও পড়ুন:
২০০ বছরের পুরোনো জমিদার বাড়ির বেহাল দশা - হারিয়ে যাচ্ছে মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘পর্বত বাগান’
চোকদার ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফ বলেন, আমি বোঝার পর থেকেই এই স্লুইসটি বন্ধ দেখে আসছি। কখনও এটি মেরামত করতেও দেখিনি। দিনদিন এটা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। এছাড়া এর যন্ত্রপাতিও চুরি হয়ে গেছে। সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ এভাবে দিনের পর দিন নষ্ট হলেও এ নিয়ে যেন সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, এই স্লুইস গেটগুলো বেশিরভাগই ব্রিটিশ আমলের। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আবার কোনো কোনো স্লুইচ গেট একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো যেমন দেশের সম্পদ তেমন এগুলো ঐহিত্য। তাই এগুলো রক্ষা করা আমাদের সবার দাবি।
মাদারীপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান বলেন, মাদারীপুর জেলায় নতুন করে স্লুইস গেট নির্মাণে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই এর কার্যক্রম শুরু হবে। আর এতে কৃষকরা উপকৃত হবে।
এমএন/জেআইএম