‘অক্ষমতা’ নিয়ে হাতুড়ে চিকিৎসা বিপদ ডেকে আনতে পারে
যৌন স্বাস্থ্যের কথা উঠলেই আমাদের সমাজে এক ধরনের সংকোচ কাজ করে। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন সক্ষমতা কমে গেলে বিষয়টিকে ব্যক্তিগত দুর্বলতা, মানহানিকর অবস্থা কিংবা লুকিয়ে রাখার মতো সমস্যা বলে মনে করা হয়। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে উত্তেজনাজনিত অক্ষমতা বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন একটি নিরাময়যোগ্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যেমন স্বাভাবিক, তেমনি প্রয়োজনীয়ও। তবে লজ্জা, অস্বস্তি বা সামাজিক ট্যাবুর কারণে আমরা অনেকেই চিকিৎসা নিতে দ্বিধা বোধ করি। এতে সমস্যাটি আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এছাড়াও ব্যক্তিজীবন, বিবাহিত সম্পর্ক, আত্মবিশ্বাস — সবকিছুর ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা উত্তেজনাজনিত অক্ষমতা কী? ইরেকটাইল ডিসফাংশন বলতে বোঝায় যৌনমিলনের জন্য প্রয়োজনীয় উত্তেজনা তৈরি না হওয়া বা উত্তেজনা দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে না পারা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন সমস্যা কিছুটা বাড়লেও শুধুমাত্র বয়সই এর কারণ নয়। ধূমপান, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনধারা, হরমোনের সমস্যা — এসব কারণেও যৌন সক্ষমতা কমতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বিষণ্ণতা, দাম্পত্য টানাপোড়েন,
যৌন স্বাস্থ্যের কথা উঠলেই আমাদের সমাজে এক ধরনের সংকোচ কাজ করে। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন সক্ষমতা কমে গেলে বিষয়টিকে ব্যক্তিগত দুর্বলতা, মানহানিকর অবস্থা কিংবা লুকিয়ে রাখার মতো সমস্যা বলে মনে করা হয়।
অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে উত্তেজনাজনিত অক্ষমতা বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন একটি নিরাময়যোগ্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যেমন স্বাভাবিক, তেমনি প্রয়োজনীয়ও।
তবে লজ্জা, অস্বস্তি বা সামাজিক ট্যাবুর কারণে আমরা অনেকেই চিকিৎসা নিতে দ্বিধা বোধ করি। এতে সমস্যাটি আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এছাড়াও ব্যক্তিজীবন, বিবাহিত সম্পর্ক, আত্মবিশ্বাস — সবকিছুর ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা উত্তেজনাজনিত অক্ষমতা কী?
ইরেকটাইল ডিসফাংশন বলতে বোঝায় যৌনমিলনের জন্য প্রয়োজনীয় উত্তেজনা তৈরি না হওয়া বা উত্তেজনা দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে না পারা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন সমস্যা কিছুটা বাড়লেও শুধুমাত্র বয়সই এর কারণ নয়।
ধূমপান, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনধারা, হরমোনের সমস্যা — এসব কারণেও যৌন সক্ষমতা কমতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বিষণ্ণতা, দাম্পত্য টানাপোড়েন, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি বা মানসিক ট্রমাও দায়ী থাকে।
লজ্জা নয় চিকিৎসায় আছে সমাধান
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানিয়েছে, যৌন সক্ষমতা কমে গেলে লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘যদি কারও উত্তেজনা অর্জন করতে বা ধরে রাখতে নিয়মিত সমস্যা হয়, তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ।’
চিকিৎসকরা প্রথমত রোগীর শারীরিক অবস্থা, লাইফস্টাইল, মানসিক অবস্থা — সবকিছু বিবেচনা করে সঠিক কারণ বের করার চেষ্টা করেন। প্রয়োজন হলে রক্তে শর্করা, লিভার, কিডনি ফাংশন, হরমোনের মাত্রা, কোলেস্টেরলসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করেন। কারণ ইরেকটাইল ডিসফাংশন অনেক সময় বড় কোনো অসুখের পূর্বাভাস হিসেবেও দেখা দেয়। তাই এটি লুকালে বিপদ বাড়তে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতিও একেক ক্ষেত্রে একেক রকম। কারও ক্ষেত্রে শুধু লাইফস্টাইল পরিবর্তন যেমন ধূমপান-অ্যালকোহল পরিহার, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত ঘুম—এগুলোই সমস্যা কমিয়ে আনে। আবার কারও জন্য প্রয়োজন ওষুধের। তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ খাওয়া ক্ষতিকর।
সমস্যা সবসময় শারীরিক নয়
তবে উত্তেজনা ধরে রাখতে না পারা সবসময় শারীরিক কারণে হয় না। তাই যদি মানসিক কারণ প্রাধান্য পায়, তাহলে কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি কার্যকর হতে পারে। দাম্পত্য যোগাযোগে সমস্যা থাকলে দম্পতি থেরাপি বা কাপল কাউন্সেলিং উপকার দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে শকওয়েভ থেরাপি, হরমোন থেরাপি, ভ্যাকুয়াম ডিভাইসের মতো আধুনিক চিকিৎসাও ব্যবহার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সঠিকভাবে কারণ শনাক্ত হলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের চিকিৎসায়ই মানুষের মানসিক চাপ ও যৌন আত্মবিশ্বাস আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
সামাজিক বাধা
তবে এই ধরনের সমস্যার সবচেয়ে বড় বাধা লজ্জা। বেশিরভাগ পুরুষই প্রথমদিকে বিষয়টি নিয়ে কাউকে বলতে চান না, এমনকি সঙ্গীকেও না। অনেক সময় বাজারে পাওয়া ভেষজ, দেশি-বিদেশি নানা ‘বুস্টার’ পণ্যের বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে নিজেরা ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। এতে সাময়িকভাবে কিছুটা পরিবর্তন এলেও দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। অথচ একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সামান্য নির্দেশনা পুরো সমস্যার চিত্রটাই বদলে দিতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, যৌন সক্ষমতা কমে যাওয়া মানে দুর্বলতা নয়, বরং এটি শারীরিক বা মানসিক পরিবর্তনের সংকেত। যেভাবে মাথাব্যথা বা গলাব্যথা হলে আমরা ডাক্তার দেখাই, ঠিক তেমনভাবেই যৌন সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা না করার কারণে সম্পর্কের ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়ে। সঙ্গীর মনে ভুল ধারণা তৈরি হয়, দূরত্ব বাড়ে এবং অনেক সময় দাম্পত্যজীবনে অশান্তি বয়ে আনে। তাই সমস্যা হলে তা গোপন না করে সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা, চিকিৎসকের কাছে যাওয়া সহজ সমাধান।
তথ্যসূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক, মায়ো ক্লিনিক, এনএইচএস, ওয়েব এমডি
মামুনূর রহমান হৃদয়/এএমপি/জেআইএম
What's Your Reaction?