অঞ্জনার মৃত্যু নিয়ে রহস্য, সন্দেহের কাঠগড়ায় পালিত পুত্র

3 hours ago 5

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান মারা গেছেন গেল ৪ জানুয়ারি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ‘দস্যু বনহুর’খ্যাত এই অভিনেত্রী। এদিকে তার মৃত্যুর পর রহস্য ছড়িয়েছে। কেউ বলছেন অঞ্জনার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আবার কেউ দাবি করছেন, তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। অঞ্জনার শরীরে বেশকিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

গত ৪ জানুয়ারি সকালে হাসপাতাল থেকে মরদেহ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিনেত্রীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে উপস্থিত সবার মধ্যে নানা প্রশ্ন ওঠে। মরদেহ গোসলের সময় এসব চিহ্ন স্পষ্ট হওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় আসে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)-তে নেওয়া হলে, এ নিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে বেশ শোরগোল শুরু হয়।

একে একে বেরিয়ে আসে অঞ্জনার পালিত ছেলে নিশাত মনিকে নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। একাধিক শিল্পীর অভিযোগ, অঞ্জনার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছেন মনি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অঞ্জনার বোন রঞ্জনাও।

গতকাল রবিবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে অঞ্জনার মৃত্যু রহস্য উন্মোচন এবং সম্পদের হিসেব চেয়ে বিচার জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া চিকিৎসায় অবহেলাসহ আরও কিছু কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত অভিনেত্রীর কাছের কয়েকজন শিল্পী অভিযোগ তুলেছিলেন। এক্ষেত্রে অঞ্জনার পালিত ছেলে নিশাত মনিকে সন্দেহও করেছেন অনেকে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে চিত্রনায়ক ও শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ডিএ তায়েবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করল সংগঠনটি।

গতকাল রবিবার বিকেলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির উদ্যোগে সদ্য প্রয়াত শিল্পী অঞ্জনা রহমান ও প্রবীর মিত্রের মাগফেরাতের জন্য মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিল শেষে অঞ্জনার ছেলে (পালিত) নিশাত মনির উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিয়ে আলোচনায় বসেন শিল্পী সমিতির নেতারা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, চিত্রনায়ক আলমগীর, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, অভিনেতা ডিএ তায়েব, সুব্রত, সনি রহমান, অভিনেত্রী রুমানা ইসলাম মুক্তি, অঞ্জনা রহমানের বোন রঞ্জনা ও পালিত মেয়ে জামাই কামরুল আলম রিপনসহ আরও অনেকে।

আলোচনা শেষে শিল্পী সমিতির মুখপাত্র ডিএ তায়েব বলেন, ‘সদ্যপ্রয়াত চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমানের মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের কথা আসছে। কেউ বলছেন অঞ্জনা আপার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে আবার কেউ বলছেন তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আজ আমরা বসেছি। আমাদের কাছে অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনার অভিযোগ এসেছে। সেজন্য শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে একটি ছায়া তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিপ্লব শরীফ, নাহিদা আশরাফ আন্না, রুমানা ইসলাম মুক্তি ও ইউসুফ খান। আগামী তিন দিনের মধ্যে আমাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকের আলোচনার সময় চিত্রনায়ক আলমগীর ও রঞ্জনা কয়েকটি প্রশ্ন করেছেন মনিকে। আমরা জানতে চাই আসলে সমস্যা কোথায়। অঞ্জনা আপার সম্পত্তির কাগজপত্র, দালিল, ব্যাংকড্রাফ্ট, ব্যাংকের চেক বইসহ কিছু বাসায় পাওয়া যায়নি। এগুলো উদ্ধার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সেগুলো পাওয়া গেলে আমরা শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে যেকোনো সিদ্ধান্তে যাব।’

শোনা যাচ্ছে, অঞ্জনার দুটি বাড়ি ও একটি প্লট ছিল। সেগুলো নাকি বিক্রি করে তিনি ভাড়া বাসায় থাকতেন। বিষয়টি কতটা সত্য- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএ তায়েব বলেন, ‘অঞ্জনা আপার পৈত্রিক কিছু সম্পত্তি ছিল। এছাড়া আরো কিছু সম্পত্তি বিক্রির টাকা ছিল। সেগুলোর কোনো হিসেব আমরা পাচ্ছি না।’

‘এগুলো চিত্রনায়িকা আন্না, মুক্তি, কোরিওগ্রাফার ইসুফসহ অনেকেই জানতেন। তাদের কাছ থেকেও আমরা নানানভাবে মন্তব্য পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমাদের এ ছায়া তদন্ত কমিটি গঠন করা। তদন্ত করে আমাদের কাছে অসংলগ্ন কিছু পেলে তিন দিন পর আমারা পুলিশে জানাব। এককথায় আগামী তিন দিনের মধ্যে ১৫ বছরের ইতিহাস পরিষ্কার হবে। এ ক্ষেত্রে মামলাও হতে পারে’- যোগ করেন তায়েব।

অভিযোগের বিষয়ে নায়িকা অঞ্জনা রহমানের পালিত ছেলে নিশাত মনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সবগুলোর উত্তর আমি তিনদিন পর দেব। আমি যদি অপরাধী প্রমাণিত হই তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তি মেনে নেব।’

এদিকে, পালিত সন্তান মনির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন অঞ্জনার পালিত মেয়ের জামাই রিপন।

উল্লেখ্য, ৬ দিন ধরে অসুস্থ থাকার পর ২২ ডিসেম্বর অঞ্জনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকটি পরীক্ষার পর রক্তের সংক্রমণ ধরা পড়ে। অবস্থা উন্নত না হওয়ায় ১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে অঞ্জনাকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। ৩ জানুয়ারি রাত ১টা ১০ মিনিটে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অঞ্জনা।

এমআই/এলআইএ/জেআইএম

Read Entire Article