চিটাগং কিংসের ব্পিক্ষে মাঠের লড়াই শুরুর আগে শক্তি, সামর্থ্য, হিসাব-নিকেশ, সমীকরণ সবই ফরচুন বরিশালের পক্ষে। দুই দলের ক্রিকেটারদের তুলনামূলক মান, ইতিহাস, পরিসংখ্যান, পারফরম্যান্স, প্রাপ্তি, সাফল্য- সব হিসেবেই বরিশালের প্রাধান্য সুস্পষ্ট।
এবারের আসরে দুই দলের মোকাবিলার ফলকে মানদণ্ড ধরলেও ফেবারিট বরিশাল। প্রথম কোয়ালিফায়ারসহ এবারের বিপিএলে দুই দলের ৩ বার দেখা হয়েছে। দুইবার জিতেছে তামিম ইকবালের দল। মোহাম্মদ মিঠুনের চিটাগং জিতেছে একবার।
লাইন-আপকে বিবেচনায় আনলে বরিশাল অনেক সমৃদ্ধ-শক্তিশালী, ব্যালেন্সড, ব্যাটিং-বোলিং সমান শক্তিশালী। টপ ও মিডল অর্ডার সমান সমৃদ্ধ। বোলিং লাইনআপও সুগঠিত। কোয়ালিটি পেসার ও কার্যকর স্পিনার সবই আছে।
দেশের ক্রিকেটের ৩ অভিজ্ঞ যোদ্ধা তামিম, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ বরিশালের বিরাট সম্পদ। অনুকূল-প্রতিকূল দুই অবস্থায় শক্ত হাতে হাল ধরার পর্যাপ্ত ক্ষমতা আছে তিনজনেরই। এমন মানের তিনহন অভিজ্ঞ যোদ্ধা বরিশালের বড় শক্তি। সাথে ইংলিশ ডেভিড মালানের মতো একজন বিশ্বমানে পারফরমার। যেকোনো কন্ডিশনে যেমন দরকার তেমন খেলতে পারেন।
মোহাম্মদ নবির মতো খাঁটি সোনার মতো অলরাউন্ডার বরিশালের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার করেছে সমৃদ্ধ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার কাইল মায়ার্সও কার্যকর পারফরমার। ব্যাট-বল হাতে সমান পারদর্শী মায়ার্সও পরিক্ষীত ম্যাচ উইনার।
বিশ্বক্রিকেটে অলরাউন্ডার হিসেবে সেভাবে খুব সমাদৃত নন জেমি নিশম। পরিসংখ্যানও তাই সাক্ষী দিচ্ছে (৭৯ টি-টোয়েন্টিতে কোনো শতক ও অধর্শতক নেই। মোট রান ৯৪৪ রান। স্ট্রাইকরেট ১৫৪.৫০। কিন্তু বিপিএলের গত আসরে রংপুর রাইডার্সের হয়ে বেশ দারুণ খেলে গেছেন নিশম। দেড়শোর বেশি স্ট্রাইকরেটে তিনশোর মত রান করেছিলেন।
এখানেই শেষ নয়, বরিশালে আরও একজন ভালো মানের বোলার আছেন; মোহাম্মদ আলী। অন্য পাকিস্তানিদের মতো অত জোরে বল করেন না। তবে সুইং আছে। বল একটু পুরনো হওয়ার পর রিভার্স সুইংটা ভালো পারেন। এই চিটাগং কিংসের সঙ্গে প্রথম কোয়ালিফয়ারে ডেথ ওভার বল করতে গিয়ে এক ওভারে ৪ উইকেটের পতন ঘটিয়ে বিপিএল রেকর্ড গড়ার কৃতিত্ব আছে এ পেসারের।
ঠিক আগের ম্যাচে এই চিটাগংয়ের বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়া পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আলীকে ড্রপ করা সহজ কাজ নয়।
আজ শুক্রবারের ফাইনালে বরিশাল কোচ ও অধিনায়কের একটি পরীক্ষা দিতে হবে। তাদের হাতে এখন ৫টি বিদেশি অপশন (ডেভিড মালান, কাইল মায়ার্স, মোহাম্মদ নবি, মোহাম্মদ আলী ও জেমি নিশম)। যেখান থেকে ৪ জনকে বেছে নিতে হবে। এখন দেখার বিষয়, বরিশাল ম্যানেজমেন্ট কাকে রেখে কাকে বাদ দেয়।
সব হিসাব-নিকেশে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই জায়গা পূরণের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বরিশালের। খালি চোখে হিসাব করলে মালান, মায়ার্সকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই আসবে না। খেলাটা শেরে বাংলায়, যেখানে স্পিনাররা বরাবরই বড় ও পরীক্ষিত শক্তি। সেখানে নবির মতো অফস্পিনারকে বসিয়ে রাখাও যে অনেক বড় ঝুঁকি।
ওদিকে অনেক টাকায় শেষ মুহূর্তে উড়িয়ে আনা হয়েছে নিশামকে। কিন্তু মোহাম্মদ আলীও তো ঠিক আগের খেলায় এই চিটাগংয়ের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকারি। তাকেই বা বাদ দেওয়া যায় কী করে? মধুর সমস্যায় বরিশাল ম্যানেজমেন্ট। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত তারা কী করেন।
ক্রিকেটার সংগ্রহে দারুণ দক্ষতার ছাপ রেখে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা আন্দ্রে রাসেল, টিম ডেভিড ও জেমস ভিন্সকে দলে ভিড়িয়েও দল সাজানোয় দূরদর্শিতার ছাপ রাখতে পারেনি রংপুর রাইডার্স। খেলার দিন সকালে এসে ৩ জনের কেউ কিছুই করতে পারেননি। তাদের ৩ বিদেশীর অকার্যকারিতায় এলিমিনেটরে খুলনা টাইগার্সের কাছে ধরা খেয়েছে রংপুর। এখন দেখার বিষয়, আজ ফাইনালে ভিনদেশিদের খেলানোর ব্যাপারে বরিশাল ম্যানেজমেন্ট কেমন দূরদর্শিতা দেখায়।
এআরবি/এমএইচ/জিকেএস