জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসা ১৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল থেকে তারা অনশনে বসেন। রাত ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে তিনজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকি ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আট শিক্ষার্থীর নাম জানা গেছে। তারা হলেন- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান তানজিল, দর্শন বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাওহীদুল ইসলাম, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ফয়সাল মুরাদ, আশিকুর রহমান আকাশ, ফেরদৌস শেখ, জুবায়ের রিওন, শের আলী ও সোহাগ আহমেদ।
অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা জানান, রাত ৯টার দিকে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন আতিকুর রহমান তানজিল। দ্রুত তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তাওহীদুল ইসলাম ও ফয়সাল মুরাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদেরও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, রাত ১০টার দিকে অনশনে বসা ছাত্ররা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং তাদের চিকিৎসার জন্য অন্য সহপাঠীরা হাসপাতালে ছোটাছুটিতে ব্যস্ত। এতে অনশনস্থলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যায়। কর্মসূচি চালিয়ে নিতে রাত দেড়টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন ছাত্রীরা। রাত পৌনে ২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অনশন চলছে।
জবি মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র অফিসার রাকিব হোসেন বলেন, তানজিলের ব্লাড প্রেসার কমে গেছে। দুপুরের পর থেকে প্রস্রাবও হয়নি। অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীর শরীরে পানিশূন্যতাও দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাওহীদের আবার ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেছে। আপাতত এখন স্যালাইন দেওয়া হবে না। আর ফয়সালের চোখ দেবে গেছে। স্যালাইন দিতে হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, অনশনে বসা ১০ শিক্ষার্থীকে গুরুতর অবস্থায় ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে সেখান থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান জবি উপাচার্য। শিক্ষার্থীদের কাছে কাজের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন তিনি। এরপর শিক্ষার্থীরা ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের আসার দাবি জানান। এসময় উপাচার্য, প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনশনে বসেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান উপাচার্য। তবে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু তাদের দাবির সঙ্গে একমত। তাদের দাবি এখন ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের কাছে। তারা তাদের আশ্বস্ত করলে তারা ফিরে যাবে।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মূলত তিন দাবিতে অনশন করছেন। তাদের দাবি- সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে।
পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আবাসন ব্যবস্থা না হয়, ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
এএএইচ/জেডএইচ/