অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে প্রকৃতির বন্ধু ফড়িং

3 hours ago 1
ফড়িং প্রকৃতির বন্ধু। এরা প্রকৃতির এক অপরিহার্য সম্পদ। ফড়িংকে প্রকৃতির নীরব সৈনিকও বলা হয়। ফড়িং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এরা প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাজ করে। বাস্তুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এ ফড়িং। তবে প্রকৃতির বন্ধু খ্যাত এ ফড়িং কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রতিকূল পরিবেশের অভাবে বসবাসের অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে। এতে যেমন প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ছে, তেমনি বিলুপ্তির পথে হাঁটছে একটি সুস্থ বাস্তুতন্ত্রের নির্দেশক এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ছোট প্রাণী ফড়িং। অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশগত বিপর্যয়, জলজ পরিবেশের সংকট, বনভূমি ধ্বংস এবং নির্বিচারে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দিন দিন ফড়িং তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল হারাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি। নানা প্রতিকূলতায় বিলুপ্তির দিকে এগুচ্ছে ফড়িং। এ সংকট মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশ সংরক্ষণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। জানা গেছে, ফড়িংয়ের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যানিসোপটেরা। তবে প্রজাতি ভেদে এদের আলাদা বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে। ফড়িং ওডোনাটা বর্গের অন্তর্গত এপিপ্রোকটা উপবর্গের একটি পতঙ্গ। ফড়িংয়ের যৌগিক চোখ, স্বচ্ছ ও শক্তিশালী পাখা এবং দীর্ঘায়ত শরীর দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। ড্রাগন ফ্লাই, ড্যামসেল ফ্লাইসহ আরও অনেক প্রজাতির ফড়িং রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ফড়িংয়ের ২০ হাজারের মতো প্রজাতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশে প্রায় ১০৩ প্রজাতির ফড়িং শনাক্ত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।  মশা, মশার লার্ভা, মাছি ও অন্যান্য ছোট পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মাছি এবং মশাবাহিত নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে ফড়িং। এরা শস্যখেতের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদনেও ভূমিকা রাখে। ফড়িংয়ের উপস্থিতি সুস্থ পরিবেশের নির্দেশক। এরা জীববৈচিত্র্য ও খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখতে সাহায্য করে। যে এলাকায় ফড়িংয়ের উপস্থিতি বেশি সে এলাকার পরিবেশ অনেক সুস্থ ও বিশুদ্ধ এবং স্বাভাবিক তা প্রমাণ করে।  স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, আমাদের ছেলেবেলায় বাড়ির আশপাশসহ বিভিন্ন জলাশয়ের পাড়ে, পতিত জমি ও বনাঞ্চলে যত ফড়িং দেখেছি সে হিসেবে এখন ফড়িংয়ের উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। দিন দিন যেন ফড়িংয়ের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।  তিনি বলেন, ছোট এ প্রাণটি আমাদের অনেক উপকারে আসে। মশা ও মশার লার্ভা খেয়ে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জিকা ভাইরাসসহ মশাবাহিত নানা রোগ প্রতিরোধে ফড়িং আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। তাই পরিবেশে ফড়িংয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমাদেরকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ফড়িংয়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে এগিয়ে আসতে হবে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, ফড়িং প্রকৃতির জন্য উপকারী প্রাণী। ছোট এ প্রাণীটির কৃষকদের আবাদ করা ফসলের মধ্য থেকে ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করে। যেসব এলাকায় ফড়িংয়ের উপস্থিতি বেশি সেসব এলাকার জমিতে কীটনাশকের ব্যবহারও কম হয়। তাই ফড়িংকে কৃষকদের বন্ধু বলা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে ফড়িং সম্বন্ধে সচেতনতা নেই বলে আমাদের নানারকম কর্মকাণ্ডে দিনদিন ফড়িং বিরোধী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এতে ফড়িং বাস উপযোগী পরিবেশ হারাচ্ছে। এতে প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় ফড়িংয়ের বাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা আমাদের গুরু দায়িত্বে রূপ নিয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। 
Read Entire Article