গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সাক্ষী হিসেবে দেওয়া তার জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি দিয়েছেন জাকির হোসাইনও। সাবেক আইজিপি মামুন মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে জাকির হোসাইনের জবানবন্দিতে।
জবানবন্দিতে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন জানান, আসামি (চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন) সম্পূর্ন সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় তার নিয়োজিত আইনজীবীর উপস্থিতিতে জবানবন্দি দেন। তিনি অনুতপ্ত হয়ে সম্পূর্ন স্বেচ্ছায় জবানবন্দি পেশ করেন। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ দেওয়ার পর জাকির হোসাইনকে জেরা করেন হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের স্টেট ডিফেন্স মো. আমীর হোসেন।
মামলার ৪০তম সাক্ষী হিসেবে মো. জাকির হোসাইন তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমি অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ঢাকায় কর্মরত আছি। গত ২৪ মার্চ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ফরোয়ার্ডিংয়ের আলোকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের জবানবন্দি রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। এর আলোকে আমি সেদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের উপস্থাপন মতে দুপুর সোয়া ১২টার সময় আসামিকে আমার খাস কামরায় গ্রহণ করি। এ সময় তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদও ছিলেন।
জবানবন্দিতে জাকির হোসাইন বলেন, আসামিকে জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা ও বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আমার উপস্থিতিতে আড়াই ঘণ্টা সময় দিই। এরপর আসামি মামুনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও বক্তব্য লিপিবদ্ধ করি। জবানবন্দি শেষে আসামি পুরো জবানবন্দি নিজে পাঠ করেন এবং সম্পূর্ন শুদ্ধ ও সঠিক স্বীকারে স্বাক্ষর করেন। তিনি তার পুরো নাম লিখেন এবং তারিখসহ সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর প্রদান করেন। জবানবন্দি শেষে আমি এই জবানবন্দির সমর্থনে প্রত্যয়ন করি। আমি তাতে উল্লেখ করি, আসামি সম্পূর্ন সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় তার নিয়োজিত আইনজীবীর উপস্থিতিতে অত্র জবানবন্দি দেন। তিনি অনুতপ্ত হয়ে সম্পূর্ন স্বেচ্ছায় এ জবানবন্দি দেন।
এর আগে রাজসাক্ষী হিসেবে পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তার জবানবন্দি পেশ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। গত বছরের ৬ আগস্ট আইজিপি হিসেবে চুক্তি বাতিল করা হয় বলে জানান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানকালীন তাঁকে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়। গত ১০ জুলাই তিনি এ মামলায় দোষ স্বীকার করে নিয়ে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালে। তাঁর আবেদন সেদিনই মঞ্জুর করা হয়। তবে অ্যাপ্রুভার হিসেবে জবানবন্দি দেন গত ২ সেপ্টেম্বর ।
জবানবন্দিতে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। প্রত্যেক শহীদের পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেছেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার ওই নির্দেশনা পেয়েছিলেন তিনি। সেদিন থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়েছিল।
এফএইচ/এমএমকে