সরকারি কার্যালয়টিকেই নিজের ‘ব্যক্তিগত চেম্বার’ মনে করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মামুনুল ইসলাম। রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে রাজশাহীর নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিতে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং অনুমতি ছাড়া তার দপ্তরে প্রবেশের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আওয়ামী আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন স্টেশন ও ট্রেন পুনরায় চালু এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
রোববার সকালে একটি স্মারকলিপি নিয়ে জিএমের কার্যালয়ে যান এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তারা প্রথমেই জিএমের কার্যালয়ের সামনে ট্রেনটি চালুর দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন। এরপর তারা জিএমের কার্যালয়ে ঢুকতে চান। তখন দপ্তরের একজন পিয়ন জানান, মহাব্যবস্থাপক মামুনুল ইসলাম ওয়াশরুমে আছেন। এরপর পিএসকে জানিয়েই সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিকরা কক্ষের ভেতরে ঢুকে জিএমের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। আগে থেকে ওই কক্ষে জিএমের টেবিলের সামনে চেয়ারে বসেছিলেন প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক ও প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান।
এদিকে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই দপ্তরে লোকজন দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন জিএম মামুনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার চেম্বারে আসবেনতো অনুমতি নিবেন না? অনুমতি ছাড়া রুমে ঢুকে গেছেন। অনুমতি নেওয়ার তো ব্যাপার থাকে।’
তখন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘আমরা আপনার পিয়নকে জানিয়েই ঢুকেছি। আর এটা আপনার চেম্বার মানে? আপনার চেম্বার কেন? এটা সরকারি অফিস। আপনি সরকারের একজন সার্ভেন্ট।’
এ সময় জিএম মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘কিন্তু আপনি একটা চেম্বারে আসবেন, বলবেন না?’
তখন জামাত খান বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আছে আপনি ফোন ধরেন না। অনেকের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন। এটা আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এই অফিস চলে জনগণের টাকায়। জনগণকে কেন অনুমতি নিয়ে আসতে হবে? আজ আপনি যে ভবনে বসে আছেন, সেটা ৯৭’ এ আমরা রক্ষা করেছি। এই রেল ভবন রাজশাহী থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। আমরা রক্ত দিয়ে এটা রক্ষা করেছি।’
এ সময় একজন সাংবাদিক জিএমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার খুশি হওয়া উচিত ছিল যে জনগণের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজশাহীর নাগরিক সমাজ এসেছে। কিন্তু আপনি আপনার ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আপনি বলেছেন, যে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। আপনি দেখেননি, পিয়নের কাছে অনুমতি নেওয়া হয়েছে? আপনি কোনো সাংবাদিকেরও ফোন ধরেন না। আপনি পাবলিক সার্ভেন্ট। ২৪ ঘণ্টা আপনি সার্ভিস দেবেন।’
জামাত খান তখন জিএমকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, ‘ইয়ার্কি করার জায়গা পান না আপনারা। মানুষের দুর্ভোগ এবং কত কষ্ট হচ্ছে! সেদিকে আপনাদের খেয়াল নাই। আপনি আপনার চেম্বারের অনুমতি নিয়ে বসে আছেন। বছরে আমি কত টাকা ইনকাম ট্যাক্স দিই জানেন আপনি?’
পরে রাজশাহী ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন ও সিনিয়র সাংবাদিক হাসান মিল্লাত পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরপর জিএম মামুনুল ইসলামের কাছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লেখা স্মারকলিপিটি হস্তান্তর করা হয়। ওই স্মারকলিপিতে রাজশাহী-পার্বতীপুর রুটের বন্ধ হয়ে যাওয়া উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় চালুর দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, আমরা জনগণের বিভিন্ন দাবি নিয়ে একটি স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম জিএমের দপ্তরে। সেখানে আগে থেকেই আরও কয়েকজন ছিলেন। আমরা রুমে প্রবেশের সময় জিএম ওয়াশরুমে ছিলেন। কিন্তু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই আমাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যভাষায় কথা বলেন। খারাপ আচরণ করেন। আমরা এটার প্রতিবাদ করেছি।
তবে এ বিষয়ে জিএম মামুনুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাখাওয়াত হোসেন/এফএ/এএসএম