‘অনেক কষ্টে মা হয়েছি ঠিকই, সন্তানের দুধ কেনার টাকা নেই’

3 months ago 6
‘অনেক কষ্টে মা হয়েছি ঠিকই, সন্তানের দুধ কেনার টাকা নেই! ক্যামেরার সামনে ইন্টারভিউ দিয়ে কি হবে; এখন আর ভাইরাল হওয়ার ইচ্ছে নেই। বিয়ের সময় অনেক সাংবাদিক দেখেছিলাম এখন আর কেউ আসে না। মরে গিয়েও বেঁচে আছি! আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’ সাংবাদিকদের সামনে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন পিরোজপুরের আলোচিত বামন দম্পতি ৪৪ ইঞ্চি লম্বা আল আমিনের স্ত্রী ৩৩ ইঞ্চি লম্বা শাম্মী আক্তার।  গত সোমবার (১২ মে) ঢাকার পিজি হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে এক সন্তানের জন্ম হয় ওই গৃহবধূর। আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্র বাবা-মায়ের সহযোগিতায় এ যাত্রায় বেঁচে গিয়ে সরকারের প্রতি কিছুটা আক্ষেপ করেছেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর শর্ষিনা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে মো. আল আমিনের (২৫) সঙ্গে একই উপজেলার সোহাগদল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. শাহজাহানের কন্যা শাম্মী আক্তারের (২৩) বিয়ে সম্পন্ন হয়।   এদিকে আলামিন ও শাম্মী আক্তার বামন প্রকৃতির লোক হওয়ায় তেমন কোনো ভারী কাজ করতে পারে না। গ্রামবাসী তাকে আগ্রহ করে কোনো কাজেও নেয় না।  শাম্মী আক্তারের মা শিরিন বেগম বলেন, আমার মেয়ে শাম্মী আক্তার উচ্চতায় ছোট হওয়ায় বিয়ে দিয়েছিলাম বামন আল আমিনের সঙ্গে। আলামিন কোনো কাজ করতে পারে না। আমরাও অসহায় ও দরিদ্র, ওদের দেখাশোনা করতে পারি না। ৮ দিন আগে ওদের ঘরে একটি ফুটফুটে সন্তান হয়েছে। হাসপাতালে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে কোনো রকম মা ও সন্তানকে বাঁচিয়ে এনেছি। কীভাবে যে এই ধারের টাকা পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না। সরকার যদি ওদের একটু সহযোগিতা ও ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিত; তাহলে ওরা খেয়ে পরে ভালো থাকতে পারত। ভুক্তভোগী আলামিন বলেন, বিয়ে হয়েছে আমাদের প্রায় চার বছর হয়ে গেল। আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছে বলে আজ আমি সন্তানের বাবা হয়েছি। সবাই আমাকে দেখে উপহাস করে কেউ কাজে নেয় না। সরকার যদি আমাকে একটু সহযোগিতা করত অথবা ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে অন্যের উপর নির্ভর করতে হতো না।  ইউপি সদস্য দেব কুমার সমাদ্দার জানান, ওদের বিয়েতে হাজার হাজার লোক বিনে দাওয়াতে এসেছিলেন। দেশ-বিদেশের অনেকে আমাকে ফোন করে তাদের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু তাদের ঘরে নতুন অতিথি (সন্তান) এলেও তাদের মনে শান্তি নেই। শুনেছি অনেক ধারদেনা করে হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়েছে। এ বিষয়ে স্বরূপকাঠী প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, গত চার বছর আগে এই দম্পতির বিয়ের সময়ে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও ফেসবুকে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা প্রচার করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের পরবর্তী সময়ে তাদের খোঁজ কেউ রাখেনি। এরই ধারাবাহিকতায় এই দম্পতি সাংবাদিকদের সঙ্গে অভিমান করে এসব বলেছিলেন। আসলে তারা দরিদ্রতার কষাঘাতে জীবন পার করেছেন। আমাদের সবার উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ দম্পতির সম্পর্কে আমার সঙ্গে কেউ আলাপ করেনি। তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি দুঃখজনক। তারা যদি সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের যোগ্য হয় অবশ্যই তাকে সহযোগিতা করা হবে।
Read Entire Article