অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর হাতে পিটুনি

2 hours ago 4

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রীর সামনে এক ব্যবসায়ীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এর আগে গত বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর মহল্লায় মারধরের ঘটনাটি ঘটে। পরে তাকে পুলিশে তুলে দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সঙ্গে চলাফেরা করায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে পেটান বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় প্রকাশ্যে কেউ কথা না বললেও সর্বত্র চলছে সমালোচনা।


আহত ওই ব্যবসায়ীর নাম উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল (২৫)। তিনি বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর শ্মশানঘাট এলাকার সবজি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ মণ্ডলের ছেলে। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান পিয়াসের অনুসারী বলে জানা গেছে। 

গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য উজ্জ্বল গত বুধবার বাড়িতে ফেরেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা করেন। পরে শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আতিকুর রহমান নিজের ফেসবুকে ওই ভিডিও পোস্ট করেন।

২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএম ইকবাল হোসেন রাজুর অনুসারী শ্রমিক দলের জালাল ভূঁইয়া, যুবদলের জাহাঙ্গীর আলম, শুভসহ ৮-১০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে উজ্জ্বলের বাড়িতে গিয়ে তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। উজ্জ্বলের বৃদ্ধ মা-বাবা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারা আবার এগিয়ে গেলে তাদের মারধর করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এসময় তিনি হামলাকারীদের পা ধরে মারধর বন্ধ করার অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি। এক পর্যায়ে উজ্জ্বল অচেতন হয়ে যায়।

শেষে বিএনপির নেতারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাকে ফৌজদারি আইনের ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালতে পাঠায়। আদালত ওই দিনই তার জামিন মঞ্জুর করেন।

ভিডিওটি পোস্ট করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আতিকুর রহমান পিয়াস ফেসবুকে লেখেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগকে সমর্থন করায় বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতাসহ সবাইকে বেধড়ক পিটিয়েছে বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।’ তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিচয় তুলে ধরে লেখেন, ‘এতকিছুর পরও তাকে পুলিশে তুলে দেওয়া হলো। তাদের পরিবারকে দুর্বৃত্তরা বারবার এলাকা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে।’

এ ঘটনা নিয়ে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার এমনকি প্রতিবেশীরাও সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহস পাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রতিবেশী ঘটনাটি নির্মম বলে দাবি করে দোষীদের বিচার দাবি করেন।

জানতে চাইলে বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএম ইকবাল হোসেন রাজু কালবেলাকে বলেন, ‘ভিডিওটি দেখেছি। যারা এটি করেছে তারা অন্যায় করেছে। আমি অভিযুক্তদের ডেকে শাসন করেছি এবং ভবিষ্যতে যেন এমন কাজ না করে তা বলেছি।’

বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, খবর পেয়ে উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে তাকে ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

Read Entire Article