অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। এসময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কিছু বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নেন। সেই বিপ্লবী সিদ্ধান্তের মধ্যে আপনি এক নম্বরে বলেন, যে ক্ষমতায় আসবে তাকে ওয়াদা করতে হবে ‘বাহাত্তরের সংবিধান’ বাতিল করতে হবে।
ওসমান হাদি বলেন, যে বাহাত্তরের সংবিধানের মধ্য দিয়ে বাকশাল হয়েছে, বিচারিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে; সেই সংবিধানকে নতুন সংসদে বাতিল করে, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের আলোকে এবং জুলাই সনদের আলোকে নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে হাদি ড. ইউনূসের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, প্রতিনিধিত্বশীল স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনে যদি দশজনের মেম্বার হয়; দুইজন বিরোধী দল, দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, একজন শহীদ পরিবার থেকে থাকবে। আর এই পাঁচজনই সরকারের সদস্য বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া বাকি পাঁচজন থাকবে অন্য স্টেক থেকে।
তিনি দাবি করেন, জনপ্রশাসন সংস্কার করতে হবে। সবকিছুতে একমাত্র বিসিএস প্রশাসন ছড়ি ঘুরাবে এটা হতে পারে না। আপনি ( প্রধান উপদেষ্টা) ক্ষমতার ডিসেন্ট্রালাইজেশন (বিকেন্দ্রীকরণ) করেন। অন্যান্য ক্যাডারগুলোকে আরেকটু এমপাওয়ার করেন। এই যে প্রশাসকরা নিজেদের প্যারালাল রাষ্ট্র ভাবে, এটাকে ভেঙে দিতে না পারলে আবার সে আমলাতান্ত্রিক দেশ হয়ে যাবে। এছাড়াও তিনি জুডিসিয়াল রিফর্ম ও নির্বাচন কমিশনের বর্তমান প্যাটার্ন ভেঙে দেওয়ার দাবিও জানান ।
ওসমান হাদি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে সাতচল্লিশকে বাদ দিয়ে, এই অঞ্চলের দুইশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামকে বাদ দিয়ে মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদের বয়ান রাখা হয়েছে। শাহবাগের জঘন্যতম মত দিয়ে এই বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে আমাদের দেশে বিচারিক হত্যাকাণ্ডকে সব থেকে বড় লেজিটিমিসি দেওয়া হয়েছে।
সাতচল্লিশ, একাত্তর আর চব্বিশকে মুখোমুখি দাঁড় করানো বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাতচল্লিশের ধারাবাহিকতা হলো একাত্তর; আর একাত্তরের চূড়ান্ত ধারাবাহিকতা আমাদের ২০২৪। সুতরাং সাতচল্লিশ, একাত্তর আর চব্বিশকে একটার বিপরীতে আরেকটা দাঁড় করানোর চেষ্টা বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র।
জুলাই ঘোষণাপত্রে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা গণহত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর উল্লেখ না থাকায় তিনি প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আপনারা এত হীনম্মন্যতা কীসের? শাপলাই হীনম্মন্যতা, পিলখানায় হীনম্মন্যতা; তাহলে তাদের রক্তের বিনিময়ে যে সরকারে আছেন সেখানে থাকতে আপনাদের লজ্জা করে না?
সবশেষে তিনি ড. ইউনূসকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবে না থেকে ‘জুলাইয়ের বন্দুক’ হাতে নিয়ে দেশ পরিচালনার অনুরোধ জানান।
এফএআর/কেএইচকে/কেএসআর/জেআইএম