কিছু দিন আগে নির্বাচন হবে না, এমন একটি অপপ্রচার ও গুজব শোনা গেছে। কিন্তু সেই গুঞ্জন অসাড় প্রমাণিত হয়েছে। কোনো অ্যাডহক কমিটি নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক পর্ষদের নির্বাচন হবে আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই।
অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার ও অধিনায়ক তামিম ইকবাল বোর্ড নির্বাচন করবেন। এবং সভাপতি পদে মূল লড়াই হবে জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়কের মধ্যেই।
তামিম ইকবাল ঢাকার ক্লাব ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করবেন। জানা গেছে, গত বছর প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে যে দলের ‘ডোনার’ ছিলেন, সেই গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবেই নির্বাচন করবেন তামিম।
অন্যদিকে বুলবুল ঠিক কোন ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচন করবেন, তা প্রকাশ করেননি। তিনি জানান, আমি কোথা থেকে নির্বাচন করবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই বোর্ডে থাকতে আগ্রহী বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক।
যেহেতু আইসিসির ক্রিকেট উন্নয়ন কর্তা হিসেবে চাকরিতে থাকায় দীর্ঘদিন ঢাকার ক্রিকেটের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না, তাই বুলবুলের পক্ষে ক্লাব কোটায় নির্বাচন করা খুব কঠিন।
এছাড়া সার্ভিসেস, বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক ক্রিকেটার ও কোয়াব কোটা মানে ক্যাটাগরি ‘সি’ থেকেও বুলবুলকে নির্বাচন করা জটিলতর। এসব ক্যাটাগরিতে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও কোয়াবের সাবেক সদস্য সচিব দেবব্রত পাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে বুলবুল সম্ভবত জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচনে অংশ নিবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, ঢাকা বিভাগের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে নির্বাচন করবেন বুলবুল। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেহেতু কোনো রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় নেই, তাই জেলা ও ক্রীড়া সংস্থায় রাজনৈতিক সরকারের পছন্দর কেউ নেই। আর এই মুহূর্তে ফরিদপুর ছাড়া বাকি ১৫ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সব কটায় নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই অ্যাডহক কমিটির মধ্য থেকেই কাউন্সিলর হবেন। ওই কাউন্সিলরদের ওপর সরাসরি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তাদের ভোট ও সমর্থন বুলবুলের প্রতিই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওদিকে ঢাকার ৭৬ ক্লাবের ক্যাটাগরি থেকে তামিমের জিতে আসা এক রকম নিশ্চিত। তামিম একা নন, তার নেতৃত্বে যে ১২ জনের প্যানেল নির্বাচন করবে, তাদের সবার সম্ভাবনা খুব বেশি। কাজেই শেষ পর্যন্ত বিসিবিপ্রধান হওয়ার লড়াইটা তামিম আর বুলবুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
ধরা যাক, শেষ পর্যন্ত বুলবুল ও তামিম নিজ নিজ ক্যাটাগরি থেকে জিতে পরিচালক হয়ে বোর্ডে গেলেন। তারপর দুজনের মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
ইতিহাস জানাচ্ছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) হলেও বিসিবিতে আগে কখনো সভাপতি পদে পরিচালকদের মধ্যে নির্বাচন হয়নি। প্রতিবার নাজমুল হাসান পাপনই পরিচালকদের সবার সমর্থনে সভাপতি হয়েছেন। কেউ তার বিপক্ষে দাঁড়ায়নি।
ভাবা হচ্ছে, এবার বুলবুল ও তামিম মুখোমুখি হবেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবেন। মানে, বিসিবির ইতিহাসে প্রথমবার সভাপতি পদে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।
এখন প্রশ্ন হলো, সেই সভাপতির নির্বাচনী লড়াইয়ে কার সম্ভাবনা কেমন? তামিম ভক্তদের চোখে তামিমই ভবিষ্যত বিসিবিপ্রধান। আবার বুলবুলের সমর্থকেরা ভাবছেন, তাদের প্রার্থীই হবেন বিসিবির পরবর্তী সভাপতি।
যেহেতু ঢাকার ক্লাব কোটায় সবচেয়ে বেশি, ১২ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন, তাই খালি চোখে তামিম ইকবালের পাল্লা ভারি মনে হচ্ছে। পূর্ণ প্যানেলে জিতে আসলে সভাপতির ভোটে ওই ১২ ভোট কনফার্ম তামিমের।
অন্যদিকে বুলবুলের শক্তির বড় উৎস হলো জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচিত হয়ে আসবেন ১০ পরিচালক। ধারণা করা হচ্ছে, এর বড় বা মূল অংশ হতে পারেন এনএসসির মনোনীত প্রার্থী। তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই সভাপতি নির্বাচনে বুলবুলের পক্ষে থাকবেন।
তারপরও ভেতরের খবর, জেলা ও ক্রীড়া সংস্থা কোটার অন্তত ২-৩ জন পরিচালক হবেন তামিমপন্হি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের দুজনের তামিমের পক্ষে থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাই যোজন-বিয়োজনে তামিমের ভোট বেশি। সে কারণেই মনে হচ্ছে, তামিমের পাল্লা ভারি। এছাড়া ঢাকার ক্লাবের ১২ পরিচালকের কারো ভোট তামিমের বিপক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
মাহবুব আনাম, লোকমান হোসেন, লুৎফর রহমান বাদল এমনকি ইফতিখার রহমান মিঠুর মতো সিনিয়র, অভিজ্ঞ ও হাই-প্রোফাইল প্রার্থী যদি প্যানেলে না থাকেন, তাহলে ঢাকার ক্লাব কোটায় যে ১২ পরিচালক জিতবেন, সভাপতি নির্বাচনে তাদের সবার ভোটই হয়তো তামিমের বাক্সে জমা পড়বে। এছাড়াও জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ১০ ভোটই বুলবুলের পক্ষে পড়ার সম্ভাবনা খুব কম। সেখান ২-৩টি তামিমের পক্ষে চলে যেতে পারে।
তবে একটি কথা, তামিম যদি ঢাকার ১২ পরিচালকের ভোট পান, আর বুলবুলের পক্ষে যদি জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে আসা ১০ পরিচালকের ভোট পড়ে, তখন লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। কারণ, এনএসসির দুজন পরিচালকের ভোট খুব স্বাভাবিকভাবেই বুলবুলের পক্ষে যাবে। তখন ‘মূল ফ্যাক্টর’ হয়ে যাবে সি ক্যাটাগরি থেকে জিতে আসা পরিচালকের ভোটটি।
‘সি’ ক্যাটাগরিতে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও কোয়াবের সাবেক সদস্য সচিব দেবব্রত পালের নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। সেই ভোটটি কার বাক্সে পড়ে সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
শেষ কথা হলো, তামিমের বড় শক্তি হলো ঢাকার ক্লাব কোটায় বিজয়ী ১২ পরিচালকের ভোট। কিন্তু তারপরও জিততে হলে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ১০ ভোট থেকেও অন্তত ২-৩ ভোট দরকার। কারণ, বুলবুল যদি জেলা ও ক্রীড়া সংস্থার সব ভোট (১০টিই) পেয়ে যান, তার সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দুই আর ক্যাটাগরি সি-র এক ভোট যোগ হয়, তাহলে বুলবুলই সভাপতি হয়ে যাবেন।
মানে হলো- সভাপতি হতে হলে ঢাকার ক্লাব কোটার সব ভোট পাওয়ার পাশাপাশি জেলা ও ক্রীড়া সংস্থার অন্তত ২টি ভোট দরকার হবে তামিমের। তাহলেই কেবল শেষ হাসি হাসতে পারবেন বাঁহাতি ওপেনার। কারণ, খালি চোখে ঢাকার ক্লাব কোটা (১২) আর জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কোটায় (১০) তামিম ২ ভোটে এগিয়ে থাকলেও এনএসসির ২ ভোট কিন্তু বুলবুলের। তাই জেলা ও ক্রীড়া সংস্থার পরিচালকদের অন্তত ২ ভোট না পেলে তামিমের পক্ষে জেতা সম্ভব না।
এআরবি/এমএইচ/এমএস