অপরাধে সম্পৃক্ত ও গুরুত্ব বিবেচনায় শাস্তি দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ক্ষমতাচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাজা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষেরর আইনজীবী তথা প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামির অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে সে অনুযায়ী যেকোনো শাস্তি দিতে পারবেন। মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড দিতে পারেন। এর চেয়ে কম বিভিন্ন মেয়াদের সাজাও দিতে পারেন। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে রায়ই দেবেন সেটি মেনে নেবেন বলে সাংবাদিকদের জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর গাজি এমএইচ তামিম। গত বৃহস্পতিবার জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ঠিক করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গণহত

অপরাধে সম্পৃক্ত ও গুরুত্ব বিবেচনায় শাস্তি দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ক্ষমতাচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাজা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষেরর আইনজীবী তথা প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামির অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে সে অনুযায়ী যেকোনো শাস্তি দিতে পারবেন। মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড দিতে পারেন। এর চেয়ে কম বিভিন্ন মেয়াদের সাজাও দিতে পারেন।

তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে রায়ই দেবেন সেটি মেনে নেবেন বলে সাংবাদিকদের জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর গাজি এমএইচ তামিম।

গত বৃহস্পতিবার জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ঠিক করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য বাংলাদেশে ২০১০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩’ আইনের অধীনে এ ট্রাইব্যুনালে আসামি গ্রেফতার, বিচার এবং সাজা দেওয়া হয়।

এরপর ২০২৪ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য বর্তমান ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।সময়ের বিবর্তনে এই আইনে সংশোধনী এনে বেশ কিছু ধারা সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধানও রয়েছে।

এই আইনের ২০ ধারায় দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষী সাব্যস্ত হওয়া বা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার কারণ ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করতে হবে।

ট্রাইব্যুনাল আইনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তার অপরাধের গুরুত্ব অনুপাতে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড বা অন্য যেকোনো শাস্তি দিতে পারবেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজি এমএইচ তামিম বলেন, আসামির অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা অপরাধের গভীরতা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল যে কোনো শাস্তি দিতে পারবেন। মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড দিতে পারেন। এর চেয়ে কম বিভিন্ন মেয়াদের সাজাও দিতে পারে ট্রাইব্যুনাল।

শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা চায় প্রসিকিউশন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি আদালতের কাছে প্রেয়ার করেছি। আদালত তার সুবিবেচনা প্রয়োগ করবেন এবং আমাদের পক্ষ থেকে প্রেয়ার হচ্ছে যে, এই অপরাধের দায়ে আসামিদের যেন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়।

গণঅভ্যুত্থানের আগে, শেখ হাসিনার শাসনামলে এই ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরে কীভাবে তা কার্যকর করা হবে সেটিও রায়ে উল্লেখ করা দেওয়া হয়েছে।

‌গাজি এমএইচ তামিম বলেন, মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরে আবার বলে দিয়েছেন যেন ফায়ারিং স্কোয়াডে এক্সিকিউট করা হয়। এরকম কিছু জাজমেন্ট এই ট্রাইব্যুনালে ইতোপূর্বে আছে। সেটা অপরাধের গ্র্যাভিটি বা গভীরতা বোঝাতে গিয়ে ওনারা বুঝিয়েছেন।

তবে গণঅভ্যুত্থানের পরে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে গাজি এমএইচ তামিম এখনো এ ধরনের কোনো আবেদন করেননি বলে জানান।

অপরাধের গভীরতার ওপর নির্ভর করে মৃত্যুদণ্ড অথবা বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের এখতিয়ার বলে উল্লেখ করেন এ প্রসিকিউটর।

এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এ আইনে একটি সংশোধনী এনে আসামির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ সংশোধনীর ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ট্রাইব্যুনাল তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিতে পারবে।

একই সঙ্গে, ওই সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত বা ভুক্তভোগী বা তার পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশও দিতে পারবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউটর তামীম জানান, তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়ার আবেদন করেছেন।

এছাড়া এই আইনে কোনো রাজনৈতিক দল, অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিচার করার এখতিয়ার থাকলেও সাজার বিধান ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ মে ওই আইনে দণ্ড বা সাজার বিধান যুক্ত করে সংশোধনী এনে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।

ওই সংশোধনীর ফলে ট্রাইব্যুনাল এখন সংগঠনের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, কার্যক্রম স্থগিত, নিষিদ্ধ বা সাময়িক নিষিদ্ধসহ নানা ধরনের শাস্তি দিতে পারবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারা উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদত দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যেকোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তবে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা থাকবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনের নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার।

একই সঙ্গে আইনে ‘সংগঠন’ শব্দটির সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় সংগঠন বলতে যে কোনো রাজনৈতিক দলকেও বোঝাবে। পাশাপাশি দলের অধীনস্থ, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন অথবা গোষ্ঠীকে বোঝাবে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে নৃশংসতা চালিয়েছিল তার বিচারের উদ্দেশে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এ আইন প্রণয়ন করে।

১৯৭৩ সালের এ আইন বাংলাদেশ কোলাবরেটর (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২-কে প্রতিস্থাপিত করেছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর এ আইনে সংশোধনী এনে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।

এফএইচ/এমকেআর/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow