অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ শিখতে রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে যাচ্ছেন রেলের কর্মকর্তারা!

বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য সর্বশেষ ৩০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ আমদানি হয় গত ২০২০-২১ সালে। দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানির তৈরি এসব ইঞ্জিনের কার্যাদেশের নকশা অনুযায়ী প্রদান করেনি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। আমদানির পর দীর্ঘ অচলাবস্থার কাটিয়ে চলাচল শুরু করে রেলওয়ে। চলাচলের পর থেকে নানা সংকটের মধ্যে আটকে রয়েছে কোরিয়ান ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিনগুলো।  কিন্তু চুক্তির সীমাবদ্ধতায় যন্ত্রাংশ সংগ্রহে জটিলতায় আমেরিকান কোম্পানির দ্বারস্থ হচ্ছে রেলওয়ে। এজন্য ইঞ্জিনগুলোর অপারেশন ও মেরামত শিখতে রাষ্ট্রীয় খরচে ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন রেলের শীর্ষ ৪ কর্মকর্তা।   এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আফজাল হোসেনকে একাধিকবার কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি। পরে মেসেজ দিয়ে বার্তা পাঠানো হলেও তার উত্তর পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি রেলের কোরিয়ান সর্বশেষ আমদানি করা ইঞ্জিনগুলোর মেরামত ও পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিতে ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন রেলের চার কর্মকর্তা। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সফরে শুরুতে যাওয়ার কথা ছিল রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তার। ১৭ নভেম্বর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও সর্বশেষ ২৭ নভেম্বর এ সফরে যুক্

অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ শিখতে রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে যাচ্ছেন রেলের কর্মকর্তারা!
বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য সর্বশেষ ৩০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ আমদানি হয় গত ২০২০-২১ সালে। দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানির তৈরি এসব ইঞ্জিনের কার্যাদেশের নকশা অনুযায়ী প্রদান করেনি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। আমদানির পর দীর্ঘ অচলাবস্থার কাটিয়ে চলাচল শুরু করে রেলওয়ে। চলাচলের পর থেকে নানা সংকটের মধ্যে আটকে রয়েছে কোরিয়ান ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিনগুলো।  কিন্তু চুক্তির সীমাবদ্ধতায় যন্ত্রাংশ সংগ্রহে জটিলতায় আমেরিকান কোম্পানির দ্বারস্থ হচ্ছে রেলওয়ে। এজন্য ইঞ্জিনগুলোর অপারেশন ও মেরামত শিখতে রাষ্ট্রীয় খরচে ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন রেলের শীর্ষ ৪ কর্মকর্তা।   এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আফজাল হোসেনকে একাধিকবার কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি। পরে মেসেজ দিয়ে বার্তা পাঠানো হলেও তার উত্তর পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি রেলের কোরিয়ান সর্বশেষ আমদানি করা ইঞ্জিনগুলোর মেরামত ও পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিতে ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন রেলের চার কর্মকর্তা। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সফরে শুরুতে যাওয়ার কথা ছিল রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তার। ১৭ নভেম্বর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও সর্বশেষ ২৭ নভেম্বর এ সফরে যুক্ত করা হয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবকে।  মূলত কোরিয়ান ইঞ্জিনগুলোর সমমানের কিছু ইঞ্জিন ব্যবহার করে ইন্দোনেশিয়ান রেলওয়ে। আমেরিকার প্রগ্রেস রেলওয়ের তৈরি ৯১টি ইঞ্জিনের ৯৫ শতাংশ পরিচালন প্রাপ্যতার কারণে কোরিয়ার পরিবর্তে ইন্দোনেশিয়ায় ভ্রমণ করছে রেলওয়ে।  অভিযোগ উঠেছে, রেলওয়ে কোরিয়ান ইঞ্জিন ক্রয়ের নির্ধারিত নকশার পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্রাংশ সমৃদ্ধ ইঞ্জিন সরবরাহ করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। যার কারণে আমদানির পর ট্রেন অপারেশন শুরু হলে একের পর এক ইঞ্জিন নষ্ট হতে থাকে। বর্তমানে ৪-৫ বছরের মধ্যে অর্ধেক ইঞ্জিনই বিকল হয়ে বসে আছে। রেলের কোচ, ইঞ্জিনের সাধারণ অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর ধরা হলেও অধিকাংশ সময়ই তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রেলওয়েকে সার্ভিস দেয়। কিন্তু সর্বাধুনিক ইঞ্জিন আমদানির পর অর্ধেক বিকল বসে থাকার পাশাপাশি অধিকাংশ ইঞ্জিনই অর্ধেক মোটরে চলাচল করছে। যার কারণে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তীব্র ইঞ্জিন সংকটে নাজুক পরিস্থিতি পার করছে।   এ সংক্রান্ত নথিপত্রে দেখা গেছে, সরকারি আদেশ অনুযায়ী সফরটি নির্ধারিত হয়েছে ১৫-১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ (যাতায়াত সময় বাদে)। সফরকারী দলে আছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হাসান মাহমুদ, বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (লোকো) বোরহান উদ্দিন এবং রেলওয়ের চিফ কন্ট্রোলার অব স্টোরস (সিসিএস) মো. বেলাল হোসেন সরকার।  রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট তিনজন রেল কর্মকর্তার সফরের কথা থাকলেও শেষ সময়ে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে দলে যুক্ত করা হয়েছে। সফরের লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় চলমান আমেরিকান প্রগ্রেস রেলওয়ে নির্মিত লোকোমোটিভের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম সরেজমিনে দেখা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রগ্রেস রেলের (ক্যাটারপিলার কোম্পানি) আমন্ত্রণে এ সফর হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট নথিতে উল্লেখ রয়েছে।  চিঠিতে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় রেল পরিচালনাকারী সংস্থা পিটি কেরেতা আপি ইন্দোনেশিয়া (পিটি কেএআই) প্রগ্রেসের জিটি৩৮ এসি মডেলের লোকোমোটিভ চালায়। সুমাত্রা অঞ্চলে কয়লা পরিবহনে ব্যবহৃত ৯১টি লোকোমোটিভের বহর আছে। এসব লোকোমোটিভ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ সেবা চুক্তির আওতায় নিয়মিতভাবে যত্ন নেওয়া হয়। চুক্তির মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার ফলে লোকোমোটিভগুলো গড়ে ৯৫ শতাংশ সচল থাকে।   রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন আমদানি করা ইঞ্জিন বিকল হলে যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামত পরিচালনা করতে না পারায় উৎপাদক দেশ ও প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে বিকল্প কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হতে চাইছে রেলওয়ে। সফরের অংশ হিসেবে বান্দুং শহরে সদর দপ্তরে বৈঠক এবং সুমাত্রার টাঞ্জুং কারাং লোকোমোটিভ ডিপো পরিদর্শন, ডিপো ব্যবস্থাপনা, মেরামত পদ্ধতি, যন্ত্রাংশ মজুত ও সরবরাহব্যবস্থা এবং ত্রুটি শনাক্ত করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে রেলওয়ের সফরকারী দল। রেলের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোরিয়ান ইঞ্জিনগুলোর যন্ত্রাংশ পাওনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংকটে নতুন লোকোমোটিভ দিয়ে সার্ভিস পরিচালনায় বেগ পেতে হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ায় রেলের ৩০০০ সিরিজের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ইঞ্জিনের পরিচালন ব্যবস্থাপনা দেখে দেশে প্রয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্য সংকট নিরসনে ইঞ্জিন আমদানি করতে না পারায়, বহরে থাকা ইঞ্জিনগুলো থেকে সর্বোচ্চ সার্ভিস পেতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।  তবে অভিযোগ রয়েছে, কোরিয়ান ইঞ্জিন আমদানির সময় নকশাগত অনেক ত্রুটি ছিল। কার্যাদেশে ২২০০ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিনের জন্য ৩০০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর সরবরাহের কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ২২০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর। টি-১২ অল্টানেটরের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে টি-৯ অল্টানেটর। ফলে এসব ইঞ্জিন ঠিকমতো বিদ্যুৎ সঞ্চালন হচ্ছে না। এতে অর্ধেকেরও বেশি ইঞ্জিনের মোটর পুড়ে গেছে। যার কারণে বাধ্য হয়ে অনেক ইঞ্জিনই চলছে মাত্র দুটি মোটরে। বর্তমানে ৩০০১ থেকে ৩০৩০ পর্যন্ত ৩০টি ইঞ্জিনের মধ্যে ৩০০৩, ৫, ৮, ৯, ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২০, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮ ও ৩০৩০ নম্বর ইঞ্জিন (মোট ১৫টি) বিকল হয়ে পড়ে আছে। এ ছাড়া ৩০০৬, ১৪, ১১, ১৯ ও ৩০২৯ নম্বর ইঞ্জিন দুই মোটরে কোনো রকমে চলাচল করছে। তীব্র ইঞ্জিন সংকটে থাকা রেলওয়ের নতুন ইঞ্জিনগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় রেলের যাত্রী ও পণ্য সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow