রংপুরের তারাগঞ্জে দলিত সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তি রূপলাল রবিদাস ও প্রদীপ লাল রবিদাসকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রোববার (২৪ আগস্ট) বিকেলে মানববন্ধন করেন রবিদাস ও হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষজন।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করলে জেলা প্রশাসক তাদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন রবিদাস ও হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষজন।
স্মারকলিপি দিতে আসা প্রায় ৬০-৬৫ জন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ বিকেল ৩টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন। সেখানে তারা প্রায় ৪০ মিনিট মানববন্ধন করে হত্যার বিচারের দাবি জানান। এরপর তারা ডিসি অফিসে গিয়ে সরাসরি স্মারকলিপি দিতে চাইলে প্রায় ৫০ মিনিট করিডোরে অপেক্ষার পর জানিয়ে দেওয়া হয়, জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি গ্রহণ করবেন না। শেষ পর্যন্ত পত্রগ্রহণ শাখায় স্মারকলিপি জমা দিয়ে মলিন মুখে ফিরে যেতে হয় তাদের।
এ ঘটনায় দলিত জনগোষ্ঠীর সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দলিত বলেই ডিসি স্যার আমাদের সঙ্গে দেখা করতে চাননি।
লালমনিরহাট জেলা অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্মের সহসভাপতি ঘুগলু বাবু বাসফোর বলেন, আমরা এসেছিলাম শুধু মাত্র দুটি কথা বলার জন্য। আর্থিক সাহায্য নয়, কেবল ন্যায়ের দাবি নিয়ে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন না ডিসি স্যার। এতে আমরা আরও বেশি অসহায় বোধ করছি।
আরও পড়ুন-
- রংপুরে জামাই-শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যা: ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
- গণপিটুনিতে জামাই-শ্বশুর নিহতের ঘটনায় মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ, মামলা
- চোর সন্দেহে গণপিটুনি, প্রাণ গেলো জামাই-শ্বশুরের
সাধারণ সম্পাদক সুপেন দত্ত জানান, জেলা প্রশাসক যদি দলিত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দুটি কথা বলতেন, তবে তারা মানসিক সাহস পেতেন। কিন্তু সেটিও হলো না।
ধনেশ্বর রবিদাস বলেন, আমরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করলাম, কিন্তু শেষমেশ হতাশ হয়েই ফিরে যেতে হলো। মনে হলো আমরা এই রাষ্ট্রের নাগরিক নই।
বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলনের (বিডিইআরএম) আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাবুল রবিদাস বলেন, দলিত ও আদিবাসীরাও এ দেশের নাগরিক। তাদেরও সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু কেন লালমনিরহাটের ডিসি মহোদয় সরাসরি তাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করলেন না, সেটি তিনিই বলতে পারবেন। অথচ বাকি নয় জেলায় জেলা প্রশাসকরা সরাসরি স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার মুঠোফোন জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু ঘটনাটি রংপুরের, তাই সরাসরি স্মারকলিপি রংপুরে দেওয়া ভালো।
তিনি বলেন, স্মারকলিপিটি হেল্পডেস্কে জমা দিতে বলেছি। কেউ এরকম অভিযোগ বা স্মারকলিপি নিয়ে এলে তাদের সেখানেই জমার আদেশ দেওয়া রয়েছে। তবে মানববন্ধন করেছে কি না এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না।
দলিত ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন জেলা অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম, রংপুর বিভাগের রংপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর এবং রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচির আয়োজন করে।
মহসীন ইসলাম শাওন/এফএ/এমএস