অবিবাহিত রামকমলের ‘৪৮ ছেলে’: ভারতে ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্কের ঝড়

1 month ago 7

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে ভোটাধিকার নিয়ে তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে এক অদ্ভুত তথ্য থেকে। ২০২৩ সালের বারাণসী পৌর করপোরেশনের ভোটার তালিকায় দেখা যায়, ভেলুপুর ওয়ার্ডের শঙ্কুলধারা এলাকার এক রামকমল দাশের রয়েছে ৪৮ জন ছেলে। তারা সবাই একই বাড়িতে থাকেন, তাদের মধ্যে ১১ জনের জন্ম একই বছরে এবং সবারই বয়স ৩৭ বছর।

ভোটার তালিকার সেই ছবি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এতে ভোটার তালিকার সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, ভারতজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেয় বিরোধী দলগুলো। এই বিক্ষোভ থেকেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রসহ ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ নেতাদের আটক করে দিল্লি পুলিশ।

আরও পড়ুন>>

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘোষণার পর থেকে বিরোধীরা ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ এনে এর বিরোধিতা করে আসছে। গত ৭ আগস্ট ভারতীয় কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ আনেন, যার পরে এই বিষয়টি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই ভোটার তালিকার ছবিটি ভাইরাল হয়।

ফ্যাক্ট চেক

ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, ভোটার তালিকার ওই ছবিটি সত্য। তবে বাস্তবে এই ৪৮ জনের কেউই রামকমল দাশের ছেলে নন।

রামকমল দাশ হলেন বারাণসীর খোজওয়ায় অবস্থিত রাম জানকী মঠের মহন্ত। আর ওই ৪৮ জন তার শিষ্য। তাছাড়া, স্বামী রামকমল নিজেই অবিবাহিত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুসারে, আশ্রমে গুরু-শিষ্য ঐতিহ্য অনুসরণ করা হয়। ওই আশ্রমে বসবাসকারী সব ছাত্র স্বামীজিকে তাদের গুরু পিতা বলে মনে করেন। এ কারণেই এই ভোটার তালিকায় গুরুর নাম পিতা হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।

ভোট চুরির অভিযোগ বিরোধীদের

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ইস্যুতে বিক্ষোভ চলাকালে সোমবার (১১ আগস্ট) দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রসহ বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা।

আটকের পর রাহুল গান্ধী বলেন, এটি রাজনৈতিক লড়াই নয়, সংবিধান রক্ষার লড়াই। আমরা একটি সুষ্ঠু ও সঠিক ভোটার তালিকা চাই।

বিরোধীদের দাবি, কঠোর কাগজপত্র যাচাইয়ের এই প্রক্রিয়া দরিদ্র, মুসলিম, দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের লাখ লাখ ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় আধার কার্ড গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে না, বরং জন্ম সনদ, পাসপোর্ট বা ম্যাট্রিকুলেশন সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে—যা বহু প্রান্তিক মানুষের কাছেই নেই।

ইসির যুক্তি ও বিজেপির সমর্থন

ভারতের নির্বাচন কমিশন বলছে, এই সংশোধন নিয়মিত হালনাগাদকরণ মাত্র। মৃত, স্থানান্তরিত বা দ্বৈত ভোটারদের নাম মুছে ফেলা ও অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য এটি করা হয়।

বিজেপি এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করছে এবং বিরোধীদের আন্দোলনকে ‘দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা’ বলে উল্লেখ করছে।

তবে সমালোচকরা সতর্ক করছেন, ২০১৯ সালে আসামের নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রক্রিয়ায় যেমন প্রায় ২০ লাখ মানুষ, বিশেষ করে মুসলিমরা নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছিলেন, বিহারেও তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সূত্র: নিউজচেকার, দ্য হিন্দু
কেএএ/

Read Entire Article