অবৈধ সম্পদ গড়ে কারাগারে পিয়নের ৩ স্ত্রী, স্বামী খালাস

3 months ago 35

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক তিন মামলায় তিতাস গ্যাসের অফিস সহায়ক (পিয়ন) জহিরুল ইসলামের ৩ স্ত্রীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রায় এক কোটি টাকার অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।

রোববার (৭ জুলাই) কুমিল্লার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বেগম শামসুন্নাহার এ রায় দেন।

জহিরুল ইসলাম জহির কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের আবদুল গফুর সর্দারের ছেলে।

দুদক কুমিল্লা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক ফজলুল জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, অফিস সহায়ক জহিরুল ইসলাম ও তার তিন স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দুদক কুমিল্লা কার্যালয় থেকে পৃথক ৩টি মামলা করা হয়। ওই মামলায় তার প্রথম স্ত্রী সেলিনা আক্তারকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১২ লাখ ১২ হাজার ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড, দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা আক্তারকে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৪ লাখ ৩ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং তৃতীয় স্ত্রী আসমা আক্তারকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৩১ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তবে মামলা থেকে খালাস পেয়ে যান জহিরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে দুদক কুমিল্লা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক ফজলুল হক বলেন, পৃথক ৩টি মামলায় স্ত্রীদের সঙ্গে জহিরুল ইসলামকেও আসামি করা হয়। আদালতের রায় অনুযায়ী জহিরুল ইসলামের ৩ স্ত্রীর অর্থদণ্ডের মোট ৯৮ লাখ ১৫ হাজার ১৩১ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার রায় দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জহিরুলকে তিনটি মামলা থেকেই খালাস দেওয়া হয়।

রায় ঘোষণার পর তার স্ত্রীদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। এ সময় আদালতে তিন স্ত্রীই উপস্থিত ছিলেন।

দুদক সূত্রমতে জহিরুল ইসলাম চাকরি শুরু হয় তিতাসে মাস্টার রোলে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ৩৩৬ পিস ৪ ইঞ্চি পাইপ চুরির দায়ে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। পরে তিনি রূপগঞ্জে তিতাসের আঞ্চলিক অফিসে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে ৫ বছর কাজ করেন। সেখানে থেকেই ‘জহির বীথি এন্টারপ্রাইজ’সহ তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা স্ত্রী ও ভাগিনার নামে। পরে জহির রূপগঞ্জ তিতাসের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন থেকেই শুরু তার অবৈধ গ্যাসসংযোগ-বাণিজ্য, মিটার টেম্পারিং এবং নানা অপকর্ম। ‘ডেইলি বেসিসে’ থাকার সময়ই ফাইল চুরিসহ নানা অভিযোগে রূপগঞ্জ তিতাস অফিস থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। এরপর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রধান কার্যালয়ে তিতাস গ্যাস ভান্ডার বিভাগের পিয়ন হিসেবে চাকরি নেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই কর্মরত আছেন। অবৈধ গ্যাস সংযোগ-বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি নিজের ও তিন স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কয়েকশ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, দামি গাড়ি ও বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে।

এদিকে দুদকের দায়ের করা তিন মামলায় তার স্ত্রীদের সাজা ও জরিমানা হলেও জহিরের অব্যাহতি পাওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে জনতে জহিরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া জানা যায়নি।

জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/জেআইএম

Read Entire Article