অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে তিস্তা সেতু

1 month ago 9

তিস্তা সেতু সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে ২৫ আগস্ট। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই সেতুর পাশে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। খননযন্ত্র দিয়ে তোলা সেই বালু পাইপের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়ক ঘেঁষে একটি জমিতে। সেতুর মাত্র ৪-৫শ মিটার পূর্বে তোলা হচ্ছে এসব বালু। এতে ঝুঁকিতে গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তে নির্মিত স্বপ্নের হরিপুর তিস্তা সেতু।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের সহায়তায় আইন লঙ্ঘন করে সেতুর কাছ থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। তারা উদ্বোধনের আগেই সেতুকে ঝুঁকিতে ফেলছে। নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।

স্থানীয় বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, বালু তোলার কারণে তিস্তা সেতুর সংযোগ রাস্তাসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে। প্রশাসন জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে তিস্তা সেতু

তবে এই আইন অমান্য করে তিস্তা নদী থেকে তোলা হচ্ছে বালু। সেই সঙ্গে ভরাট করা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে জমি। খননযন্ত্র বসিয়ে এই সেতুর উত্তর-পূর্বে প্রায় ৪০০ মিটারের মধ্যে নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু তুলছে চক্রটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য অভিযান চালায়। কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন তারা। পরে অভিযান না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হয় পুলিশ।

এরপর ৫ জুলাই কুড়িগ্রাম চিলমারীর নৌপুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা খননযন্ত্র বন্ধ করতে গিয়ে একজনকে আটক করেন। কিন্তু সংঘবদ্ধ বালু উত্তোলনকারী ও তাদের বাহিনী নৌপুলিশের ওপর হামলা করে আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় পরেরদিন চিলমারী নৌপুলিশ ফাঁড়ির এসআই সেলিম জামান সরকার সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ২৫-৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলার পর আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল হাকিম আজাদ।

সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর নিচে উত্তর-পূর্ব পাশে নদীতে ড্রাম ও বাঁশ দিয়ে তৈরি বাল্কহেড ভাসছে। এর ওপর একটি বালু তোলার যন্ত্র (ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন) বসানো হয়। সেই যন্ত্র থেকে নদীতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে পাইপ। অপর পাশে পাইপ দিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কের পাশে বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। নদী থেকে বালু তোলার কাজ তদারকি করছেন তিন-চারজন শ্রমিক। আর চারপাশে পাহারা দিচ্ছেন আরও চার-পাঁচজন কর্মী।

বালু ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে কারা বালু উত্তোলন করছে, তা জানি না। কিছুদিন আগে বালু তোলা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে গোলমালও হয়। এতে কয়েকদিন বালু তোলা বন্ধ ছিল। কিছুদিন থেকে আবার বালু তোলা হচ্ছে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে তিস্তা সেতু

জেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তিস্তা সেতু প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড নামের একটি চীনা প্রতিষ্ঠান এই সেতুর কাজ করে।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম বলেন, নদীতে পাবলিকলি কেউ বালু তুলছে না। কেউ বালুর ব্যবসা করছে না। সরকারিভাবে এলজিইডি হয়তো বালু তুলতে পারে। বালু তোলার সঙ্গে আমি জড়িত না। কেউ আমার কথা বলে বালু তুললে আমি কি করব?

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখছি। যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, সেতুর আশপাশে থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এতে সেতু ও সেতুর বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে পারে। বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনোয়ার আল শামীম/জেডএইচ/এএসএম

Read Entire Article