অব্যাহতি পেয়েও বিএনপি ছাড়েননি মঞ্জু, পেলেন পুরস্কার

2 hours ago 5

অব্যাহতি পেয়েও দল ছাড়েননি খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। পদহীন থেকেও হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে দীর্ঘ প্রায় চার বছর সরকার বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেন। দলের পক্ষ থেকে পান পুরস্কারও। এবার খুলনা-২ আসনের বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিএনপি খুলনা-২ আসনের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নাম ঘোষণা করে।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালে কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেওয়া খুলনা মহানগর বিএনপির কমিটি ঘিরে দলীয় সিদ্ধান্ত পুনবিবেচনার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। দলীয় সিদ্ধান্তের বিপরীতে সংবাদ সম্মেলন করায় খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে। নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে একই বছর খুলনা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বে থাকা ৫৬১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন।

অব্যাহতি পেয়েও বিএনপি ছাড়েননি মঞ্জু, পেলেন পুরস্কার

এর আগে ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ১৯৮৭ সালে তিনি খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মনোনীত হন। ১৯৯২ সালের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হয়ে দায়িত্ব পালন করেন একটানা ১৭ বছর। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর সম্মেলনে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ সময়। তিনি ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক যুগ খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন।

আরও পড়ুন
খালেদা জিয়াসহ দিনাজপুরের ৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
অবশেষে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন আরিফ

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, নজরুল ইসলাম মঞ্জু একজন পরীক্ষিত নেতা। তিনি বিগত দিনে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিকের বেশি নেতাকর্মীর পদত্যাগ প্রমাণ করে তার জনপ্রিয়তা। তবে তাকে খুলনা-২ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় তার সঠিক মূল্যায়ন করা হয়েছে। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এরপর থেকে খুলনা-২ আসন বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ত্রয়োদশ নির্বাচনে মনোনয়নের দৌড়ে বিএনপির এ ঘাঁটিতে যোগ্য নেতারই স্থান হয়েছে।

এ বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, ‘মঞ্জু ভাইকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় তার সঠিক মূল্যায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মঞ্জু ভাই। আমরা তার সঙ্গে আছি।’

তিনি বলেন, ‘ত্রয়োদশ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মঞ্জু ভাই মাঠে থাকবেন। এখন মঞ্জু ভাই অসুস্থ। তিনি অসুস্থ থাকায় তেমন নির্বাচনি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়নি। আশা করি দ্রুত ভাই সুস্থ হলে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করা হবে।’

অব্যাহতি পেয়েও বিএনপি ছাড়েননি মঞ্জু, পেলেন পুরস্কার

আনোয়ার হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী বলেন, ‘দলীয় পদ থেকে মঞ্জু ভাইকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তিনি বিএনপির সব দলীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। চার বছর তিনি খুলনার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আমরা বিএনপিকে ভালোবাসি। পদ-পদবির জন্য রাজনীতি করি না। বিএনপিকে বুকে আগলে ধরে এ চার বছর টিকে ছিলাম। মঞ্জু ভাইকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

এম এ মান্নান নামের আরেক ভোটার বলেন, ‘যোগ্য লোক নির্বাচিত হলে প্রত্যেক ভোটার সম্মান পাবেন। সবাই উপকৃত হবেন। খুলনার উন্নয়নের জন্য এসি রুমের নেতা আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের গোলপাতার ছাউনিতে থাকা নেতার প্রয়োজন। নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নাম সবার মুখে মুখে। নির্বাচনের মাঠে তার থাকার কথা শুনে খুলনা দুই আসনের মানুষ অনেক খুশি।’

সাদিয়া আফরিন নামের আরেক ভোটার বলেন, ‘এবার আমার প্রথম ভোট দেওয়া হবে। এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি কাকে ভোট দেবো। তবে শিল্পাঞ্চল খুলনার যে উন্নয়ন করতে পারবে তাকে ভোট দেব। অভিজ্ঞ লোককে ভোট না দিলে আগেও যা হয়েছে ভবিষ্যতেও তাই হবে। খুলনার উন্নয়নে যোগ্য লোক ভোট পাবে এবার।’

এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘খুলনা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাই। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো আমাদের অভিভাবক। আমরা সবাই মিলেমিশে এ দলকে এগিয়ে নিতে চাই।’

খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনের ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৩২ হাজার ২০৯ জন। এরমধ্যে সদরে এক লাখ ৮৯ হাজার ২০৫ জন এবং সোনাডাঙ্গায় এক লাখ ৪৩ হাজার ৪ জন। যার মধ্যে সদরে নারী ভোটার সংখ্যা ৯৫ হাজার ৩৬৭ জন, পুরুষ ৯৩ হাজার ৮৩২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৬ জন। সোনাডাঙ্গায় নারী ভোটার সংখ্যা ৭২ হাজার ৬০৭ জন, পুরুষ ৭০ হাজার ৩৯৩ জন। এবার নতুন করে সদরে ভোটার হয়েছে ৮ হাজার ৩২৭ জন এবং সোনাডাঙ্গায় ১০ হাজার ৩৮৭ জন।

আরিফুর রহমান/আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article