অভিবাসন: স্বপ্নের যাত্রা নাকি দুঃস্বপ্নের ফাঁদ?

19 hours ago 4

অভিবাসন—এটি শুধু এক দেশের সীমান্ত পেরোনো নয়, বরং এক স্বপ্নের যাত্রা। পরিবারের জন্য স্থায়িত্ব, অর্থনৈতিক উন্নতি আর ভবিষ্যতের নিরাপত্তার প্রত্যাশায় লাখো মানুষ প্রতিদিনই বিদেশের পথে পা বাড়ান। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের জন্য মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে এই পথ সহজ নয়; বরং ঝুঁকিপূর্ণ আর অনিশ্চয়তায় ভরা।

ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনের বাস্তবতা

অভিবাসনের পথে অনেকেই দালাল ও প্রতারকের ফাঁদে পড়েন। ভুয়া ভিসা, নকল চাকরির প্রতিশ্রুতি কিংবা অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের প্রলোভনে পড়ে অনেক শ্রমিক নিঃস্ব হয়ে যান। কেউ কেউ মানবপাচারকারীদের হাতে বন্দি হয়ে প্রাণ হারান সমুদ্রপথে, আবার কেউ অমানবিক শ্রম পরিবেশে নির্যাতনের শিকার হন। এতে কেবল একজন শ্রমিক নয়, বরং একটি পরিবারের স্বপ্নও ভেঙে যায়।

কুমিল্লার শাহাদাত হোসেন জানান, আমি দালালের কাছে তিন লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় এসেছিলাম। এসে দেখি চাকরি নেই, কাগজপত্রও জাল। তখন বুঝলাম আমার সব টাকা শেষ, পরিবারও ঋণের বোঝায় ডুবে গেছে।

আইওএম-এর উদ্যোগ

এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) কাজ করছে নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করতে। সংস্থাটি কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করেছে।

সঠিক তথ্য প্রদান, কর্মশালা, সেমিনার এবং প্রচারণার মাধ্যমে অভিবাসীদের জানানো হচ্ছে—কীভাবে বৈধ উপায়ে বিদেশযাত্রা করা যায়, কোন কাগজপত্র প্রয়োজন এবং কীভাবে প্রতারণার ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

 স্বপ্নের যাত্রা নাকি দুঃস্বপ্নের ফাঁদ?

সিলেটের প্রবাসী সেলিম উদ্দিন বলেন, আমি মালয়েশিয়ায় আসার আগে আইওএম-এর একটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে শিখেছিলাম বৈধ প্রক্রিয়ায় ভিসা করার উপায়। সেই তথ্য আমাকে অনেক সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করেছে। এখন বৈধভাবে কাজ করছি, পরিবারও নিরাপদ আছে।

তথ্যই অভিবাসীর শক্তি

আইওএম মনে করে, ভুল তথ্য বা দালালের প্রলোভনই বেশিরভাগ সমস্যার মূল। তাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য গ্রহণ করলেই শ্রমিকরা ঝুঁকি অনেকাংশে এড়াতে পারবেন।

কুয়ালালামপুরে আইওএম-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের সঠিক তথ্য ও দিকনির্দেশনা দেওয়া। যেন তারা প্রতারণার শিকার না হন এবং তাদের অভিবাসন যাত্রা নিরাপদ ও মানবিক হয়। একজন শ্রমিকের নিরাপদ যাত্রা মানে একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, অনেক অভিবাসী অজ্ঞতা ও ভুল তথ্যের কারণে দালালের ফাঁদে পড়েন। আমরা আইওএম-এর সঙ্গে মিলে প্রবাসীদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। বৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশ আসলে তারা শুধু নিরাপদ থাকেন না, দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়।

মালয়েশিয়ায় এখনও বিপুলসংখ্যক অনিয়মিত বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ বৈধতার জন্য আবেদন করছেন, কেউ অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আইওএম ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের যৌথ প্রচেষ্টা প্রবাসীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

অভিবাসন কোনো বিলাসিতা নয়—এটি অনেকের জন্য জীবনসংগ্রামের অংশ। সেই সংগ্রাম যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত না হয়, সেজন্য আইওএম কাজ করছে প্রতিনিয়ত। তাদের লক্ষ্য একটাই—নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও মানবিক অভিবাসন নিশ্চিত করা। কারণ একজন শ্রমিকের নিরাপদ যাত্রা শুধু তার নিজের নয়, বরং তার পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্যও এক বিশাল অর্জন।

এমআরএম/জিকেএস

Read Entire Article