মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার (মাউশি) রাজশাহী কার্যালয়ের পরিচালকের পদ ফাঁকা হলে তৎকালীন উপপরিচালক (ডিডি) আলমগীর কবিরকে পরিচালক পদে পদায়নের জন্য সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সরকার পরিবর্তনের পর সেই পদে তাকে পদায়ন করা হয়েছে।
গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) এ বিষয়ে এক আদেশ জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার (মাউশি)।
মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে যোগ দেন আলমগীর কবির। দুর্নীতির অভিযোগে তাকে রাজশাহী থেকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছিল। পাঁচ মাস সাত দিনের মাথায় এই আদেশে তিনি পরিচালক পদে ফিরে এলেন।
বহুল আলোচিত ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকের এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হবেন না। কিন্তু ডিডি থাকাকালে পরিপত্র লঙ্ঘন করে আলমগীর কবির প্রাপ্য না হলেও তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি ও পদোন্নতি দেন।
এই অভিযোগের পর গত ৫ জুন মাউশির মহাপরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দেয় মাউশির শৃঙ্খলাবিষয়ক শাখা। সেই সঙ্গে তাকে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ দেওয়া হয়। ২২তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তাকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে বদলি করা হয়।
কলেজের একটি সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ মাস সাত দিন ওই কলেজে কর্মরত থাকা অবস্থায় আলমগীর কবির আবারও মাউশি রাজশাহীর ডিডি পদে ফেরার জন্য ঠিকমতো ক্লাস নেননি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোল্লা মো. রুহুল আমিন কালবেলাকে বলেন, তিনি (আলমগীর কবির) দুই মাসেরও কম সময় হবে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর চিকিৎসা ছুটি নিয়ে ভারতে যান। ছুটি শেষে কলেজে যোগ দেন।
তারপর কোনো ক্লাস নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, এটা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বলতে পারবেন। তবে তিনিও বর্তমানে ঢাকায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন।
রাজশাহী মাউশির সূত্র জানায়, পরিচালক অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান শাহ গত ১০ জানুয়ারি অবসর-পূর্ব (পিআরএল) ছুটিতে যান। সে সময় দাপ্তরিক কোনো আদেশ ছাড়াই উপপরিচালক আলমগীর কবির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুমোদন ছাড়াই আর্থিক ক্ষমতাও ব্যবহার করেন তিনি। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি স্ববেতনে পরিচালক হওয়ার আবেদন করেন। প্যাটার্ন অনুযায়ী পরিচালক হতে পারেন শুধু অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারপরও তার আবেদনে সুপারিশ করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। সুপারিশে মন্ত্রী সচিবকে লেখেন, ‘শূন্য পদ সাপেক্ষে পদায়নের ব্যবস্থা নিন।’ কিন্তু কাম্য যোগ্যতা না থাকায় পরিচালক হতে পারেননি আলমগীর।
এ সময় তার বিরুদ্ধে জাল সনদে এমপিওভুক্তি, বিধি লঙ্ঘন করে তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্তি দেওয়ার বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে। একই সঙ্গে আলমগীর কবিরকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত তিনি চুপ ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি ফের রাজশাহীর উপপরিচালক পদে বসার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। এরই মধ্যে সোমবার (১৮ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, সরকারি কলেজ-২ শাখা থেকে তাকে ফের মাউশি রাজশাহীর উপপরিচালক পদে প্রেষণে পদায়ন করা হয়। এই আদেশে স্বাক্ষর করেন সরকারি কলেজ-২-এর উপসচিব মো. মাহবুব আলম।
জানতে চাইলে আলমগীর কবির কালবেলাকে জানান, তার রাজশাহীতে বদলি হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে বিমুক্ত হয়ে মাউশি রাজশাহীতে যোগদান করবেন।
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উড়ো চিঠির মাধ্যমে অভিযোগ করা হয়েছিল। এ নিয়ে অভিযোগকারীকেই পাওয়া যায়নি। তদন্তে কী হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তদন্ত কর্মকর্তাই বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. মতিউর রহমান তদন্তের বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না বলে জানান।