অর্থবছরের ৬ মাসে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

2 hours ago 5

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ইতিবাচক ধারা ফিরলেও অক্টোবর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেই চলেছে। এসময় বিক্রির পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতাও বেড়েছে। এতে নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এসময় সার্বিকভাবে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর সংখ্যা বেশি ছিল।

এদিকে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) সরকারের ঋণ হিসেবে গণ্য হয়। যা বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার হয়ে থাকে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। তাছাড়া নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সঞ্চয়প্রবণতাও কমেছে। আবার আমানত ও সরকারের বিল-বন্ডের সুদের হার বেড়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগের বড় অংশ ব্যাংক ও বিল-বন্ডে স্থানান্তরিত হয়েছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ কমেছে। তবে নতুন বছরের জানুয়ারি থেকে সুদহার বাড়ানোর ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। বিপরীতে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এর ফলে অর্থবছরের ৬ মাসে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক প্রায় ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে ভাঙানোর প্রবণতা কম থাকায় নিট বিনিয়োগ ইতিবাচক ধারায় ছিল। তবে পরের টানা ৩ মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতা বেড়ে যায়, এতে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। একই মাসে (ডিসেম্বর) ভাঙানো হয়েছে ৮ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। এতে নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) ঋণাত্মক হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এর আগের মাস নভেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। একই মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নভেম্বরে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয় ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৫ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার এবং ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে অক্টোবর মাসে নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) ঋণাত্মক ছিল ৩ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাস ব্যতিক্রম ছিল। প্রথম মাস জুলাইতে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ছিল ৪ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। একই মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে জুলাইয়ে নিট বিনিয়োগ আসে ২ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। আগস্ট মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা। একই মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই মাসে নিট বিনিয়োগ ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ৫ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। আর একইমাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে নিট বিনিয়োগ ছিল ৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। যার কারণে একক মাস হিসেবে শীর্ষে ছিল সেপ্টেম্বর।

ইএআর/এএমএ/জিকেএস

Read Entire Article