আ.লীগ নেতার স্ত্রী প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

4 weeks ago 14

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সহসভাপতি, মেলান্দহ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী উপজেলার হাজরাবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোকশানা বেগমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (১১ আগস্ট) ময়মনসিংহ অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপপরিচালক নাসির উদ্দীন বরাবর এ লিখিত অভিযোগ জমা দেন মাসুদুর রহমান রাজু নামের এক ব্যক্তি।

লিখিত অভিযোগে রাজু বলেন, রোকশানা বেগম গত ২০১৪ সালের ১ জুন বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে অফিস সহকারী উবায়দুল্লাহর মাধ্যমে বছরে প্রায় ৬ লাখ টাকার বেশি টাকা বিনা রশিদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। এ টাকার কোনো সঠিক হিসাব তার কাছে নেই।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান গত ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ (অক্টোবর পর্যন্ত) সালে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি কিন্তু ২/৩ মাস পর পর এসে শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে গেছেন। এই সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ওই শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে প্রতিমাসে সাত হাজার টাকা ভাতা প্রধান শিক্ষক রোকশানা বেগম নিজেই নেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিল্লাল হোসেন গত ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি যোগদানের পর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত  পুরো এক বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন এবং পরবর্তীতে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে বকেয়া বেতন দুই লাখ আট হাজার প্রদান করা হয়। ম্যানেজিং কমিটিকে অবহিত না করে প্রধান শিক্ষক রোকশানা বেগম ও অফিস সহকারী উবায়দুল্লাহ ভুয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে এ টাকা উঠিয়ে পুরো টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেন।

অফিস সহকারী উবায়দুল্লাহর সহযোগিতায় গত ১০ বছরে কোটি টাকার মতো আত্মসাৎ করেছেন। যা অডিট করা প্রয়োজন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার নিয়োগে বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- রোকশানা বেগম উপজেলার ফুলকোচা আলেয়া আজম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ৪/৫ বছর। সেখানে তিনি অনৈতিক কার্যকলাপ, অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও অপকর্মের দায়ে বরখাস্ত হলে কমিটির বিরুদ্ধে সাত বছরের বেশি সময় মামলা চালিয়ে যান। সেই মামলা চালানোর সময় তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জনবল কাঠামো নিয়োগ ২০০৯ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক হতে নিরবচ্ছিন্ন ১২ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, যার তার নেই। সেই তথ্য গোপন করে স্বামীর ক্ষমতা বলে হাজরাবাড়ী বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পান তিনি।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) আশরাফুল কবিরের বিবিএ সনদ, গ্রন্থাগারিক সালেহা খাতুন শিখার লাইব্রেরি সায়েন্স সনদ এবং সহকারী শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের বিএড সনদ জাল।

সালেহা খাতুন ও মোর্শোদা বেগমের স্বামীরা আওয়ামী লীগের নেতা এবং তারা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন তাদের নিয়োগের সময়। আশরাফুল কবিরের মামা আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন।

জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মহসিন আলম। আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন অনিয়মে জর্জরিত প্রধান শিক্ষিকা তার পিঠ বাঁচানোর জন্য অতিসম্প্রতি বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির মতো ন্যাক্কারজনক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন প্রধান শিক্ষিকার আস্থাভাজন কয়েকজন শিক্ষক। গত একসপ্তাহ ধরে ক্লাশ বর্জন করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।

নিজের অনিয়মের অভিযোগকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই আইসিটি শিক্ষককে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। তার এই তুঘলকি কান্ডে বিব্রত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগকারী মাসুদুর রহমান রাজু কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ আর কামরুজ্জামানের ক্ষমতা শেষ হয়েছে কিন্তু তার স্ত্রীর ক্ষমতা শেষ হয়নি। সব তথ্য প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অবৈধ প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেওয় হবে।

জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা রোকশানা বেগম সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিনা রশিদে সংগ্রহ করা টাকা বিয়ের দাওয়াত খাওয়াসহ বিভিন্ন কাজে খরচ হয়েছে বলে জানান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপপরিচালক নাসির উদ্দীন কালবেলাকে জানান,
আমি অফিসের বাইরে আছি, অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Read Entire Article