আ.লীগ সরকারের সময়ে গুম-খুনের আরও বিশদ তদন্ত প্রয়োজন
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের আমলে যেসব গুম-খুন হয়েছে তার আরও বিশদ তদন্ত প্রয়োজন। এসব ঘটনায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ দায়ী রাজনীতিবিদদের আইনের আওতায় আনা দরকার। এমনকি দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শুধু জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড নয় বরং এর আগের গুম ও হত্যাকাণ্ডগুলোও তদন্ত করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিগত সময়ে গুম হওয়া পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত ‘জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ-বিচার প্রক্রিয়া : আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন দাবি করেন বক্তারা।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, মায়ের ডাক-এর অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি, নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনীম খলিল এবং মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।
তাসনীম খলিল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম, গুম কমিশনের সদস্যরা এবং গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের তিনটি গোপন বন্দিশালা দেখানো হয়। এগুলোতে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছে। যাতে আলামত মুছে দেওয়া সম্ভব হয়।
এ সময় জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদনকে স্বাগত জানান তিনি।
তাসনীম খলিল বলেন, তদন্ত কাজে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাব নেই, তবে সক্ষমতার ঘাটতি আছে। এ জন্য সরকার চাইলে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইতে পারে। এমনকি জাতিসংঘকেও সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। এটি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হোক। অনেকেই গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল এর মাধ্যমে অনেকে বিদেশে টাকাও পাচার করেছে। সরকারের উচিত এসব টাকা ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের সাহায্য চাওয়া। জনগণকে দাবি করতে হবে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়ার জন্য।
মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে নির্যাতনে অংশ নেওয়া বাহিনীগুলোর নাম নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গুমের রহস্য উদ্ঘাটনে আরও পরিপূর্ণ তদন্ত লাগবে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) কীভাবে বিভিন্ন অপারেটরদের ইন্টারনেট বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ রেখে শত শত মানুষকে খুন করা হয়েছে। ৮০টির বেশি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে। এ সময় ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় তাহলে দেশটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে আছে এমনটা প্রমাণ করতে হবে। শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে বন্দি বিনিময় চুক্তি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, শুধু জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়নি। এটা বিগত সরকারের শুরু থেকেই হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে ‘শহীদ’ ও ‘ডেভিল হান্ট’র মতো ধর্মতান্ত্রিক শব্দ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এতদিন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে আসলেও এখন এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অথবা আগামী সরকার যদি হাসিনার এসব ধারাবাহিক মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার না করতে পারে তাহলে ধরে নিতে হবে এই ধারা এখনো চলছে। বিচার কার্যক্রমে নিরপেক্ষতার বিষয়টি জাতিসংঘের কাছে প্রমাণ করতে হবে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের সহযোগিতা নিতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত রেজুলেশন আনার জন্য লবি করতে হবে। এমনকি তদন্ত কাজে যাতে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করে তার জন্য বাধ্য করত হবে বলেও মন্তব্য করেন লেনিন।
আলোচনা সভায় গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা বর্তমান সরকারের কাছে বিগত সময়ে গুম ও খুনের যথাযথ বিচার দাবি করেন। এ সময় তারা সরকারকে গুম-খুনের তদন্ত আরও পরিপূর্ণভাবে করার আহ্বানও জানান।