চব্বিশের ‘গণহত্যা’সহ আওয়ামী লীগের শাসনামলের সব ‘অপকর্ম’ বিশ্বদরবারে তুলে ধরবে বিএনপির প্রবাসী নেতাকর্মীরা। এ জন্য প্রবাসী কমিটিগুলো কাজ শুরু করেছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে দলটি নানা কর্মসূচি নিয়েছে। স্বৈরাচার হাসিনার দুঃশাসনের ফিরিস্তি তুলে ধরে মিছিল, মিটিং, লিফলেট বিতরণ, স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। পাশাপাশি সাইবার জগতেও থাকবে সরব উপস্থিতি। এ জন্য দলের হাইকমান্ড থেকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রবাসে বসবাসরত বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, দেশের বাইরে অবস্থিত প্রতিটি কমিটিকে সংশ্লিষ্ট দেশের পার্লামেন্ট সদস্য থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তি, দপ্তর ও সংস্থাগুলোর সামনে সরাসরি, ইমেইল বা ডিজিটাল মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরতে বলা হয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনের কপিও যুক্ত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন জগতেও সবাইকে সচেতন থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসী শাখাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে যুক্তরাজ্য শাখা কমিটিকেই প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে। এখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসিত জীবন পার করছেন। বর্তমানে দলের চেয়ারপারসনও চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় প্রতিবারই বড় ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে এই কমিটি। এখনো সেই গতি ধরে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কমিটির নেতাকর্মীরা। ফলে এখান থেকেই প্রবাসের এই প্রচারাভিযান শুরু করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কর্মসূচির অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ‘আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের ভয়ংকর ১৭ বছর’ শিরোনামে যুক্তরাজ্যজুড়ে লিফলেট বিতরণ করছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। যুক্তরাজ্য বিএনপির পক্ষ থেকে গত শুক্রবার পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত হোয়াইটচ্যাপেলের ইস্ট লন্ডন মসজিদের সামনে এই লিফলেট বিতরণ করা হয়।
লিফলেটে বিডিআর হত্যাকাণ্ড, চব্বিশের গণহত্যা, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন, রিমান্ডে অবর্ণনীয় নির্যাতন, আয়নাঘরে নিষ্ঠুর নির্যাতন, মেগা প্রকল্পের নামে দুর্নীতি ও ব্যাংক লুট, মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, প্রতিবাদকারীদের সীমান্তের ওপারে ফেলে আসা, গণতন্ত্র হত্যা, বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকা, ভয়ের সাম্রাজ্য গড়ে তোলা, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিক ও সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদসহ দুর্নীতিবাজদের বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার নানা ভিডিও, ছবি ও জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদন কিউআর কোর্ডের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা ও সাইবার বিশেষজ্ঞ আইনজীবী সাহিদুর রহমান সাহিদ মনে করেন, আওয়ামী লীগ তার অপকর্মগুলো ধামাচাপা দিতে বিপুল পরিমাণ তহবিল নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের এ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র যাতে কোনোভাবেই সফল না হয়, সে জন্য প্রবাসে বিএনপিসহ সচেতন মহলের উচিত সজাগ থাকা। তাদের অপকর্মগুলো বেশি বেশি করে বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, অফিস ও আদালতে তুলে ধরা। প্রবাসী বা বিদেশিরা যাতে কোনোভাবেই এই আওয়ামী লীগকে আর গ্রহণ না করে।
জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক কালবেলাকে বলেন, খুনি হাসিনা ও তার দোসররা বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়ে বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করেছে। তার দোসররা এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। গণহত্যা, লুটপাট, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সব ধরনের অপকর্ম করার পরও তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। উল্টো তাদের এসব অপকর্ম যাতে বিদেশিরা বৈধতা দেয়, সেজন্য অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা হাসিনার সব অপকর্ম প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি মিশন, বিদেশি পার্লামেন্ট ও তাদের এমপি-মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তি ও সংস্থার কাছে তুলে ধরব। এরই মধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের প্রবাসী কমিটিগুলো কাজ করছে। খুনিরা যাতে কোনোভাবেই আর ফায়দা লুটতে না পারে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কয়সর এম আহমেদ বলেন, আমরা বিশ্বব্যাপী হাসিনার গণহত্যার প্রমাণ তুলে ধরতে কাজ শুরু করে দিয়েছি। কোথাও যাতে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য আমাদের কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে। তাদের অপকর্মগুলো যাতে কোনোভাবেই ধামাচাপা না পড়ে, সে জন্য প্রবাসী ও বিদেশিদের সামনে তুলে ধরা হবে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যজুড়ে প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে। এটা ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর সব রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।