আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ

2 months ago 40

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান জয়নুল বারীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সোনালী লাইফের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

রোবাবর (১১ আগস্ট) বিকেলে তারা আইডিআরএ’র কার্যালয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময়ে তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও জাগো নিউজের কাছে এসেছে।

১৮৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে গত ২১ এপ্রিল প্রশাসক নিয়োগ করে আইডিআরএ। গত ২৫ জুলাই এ নিয়ে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

অপরদিকে, জুলাই মাসেই সোনালী লাইফের ১০ বছরের ব্যবসাসায়ী কর্মকাণ্ডের দুর্নীতি ও অনিয়ম খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসিকে নিয়োগ করে আইডিআরএ। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) সোনালী লাইফের অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

সাবেক রেলমন্ত্রীর তদবিরে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লাইসেন্স পায় ২০১৩ সালে। ওই বছরই তারা ব্যবসায়ী কর্যক্রম শুরু করে। ২০২৩ সালে সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা গোলাম কুদুস। এর পরে ১৮৭ কোটি টাকা আত্মাসাতের বিষয়টি সামনে আসে।

অভিযোগ রয়েছে প্রশাসক নিয়োগ করা পর থেকে প্রশাসকের কর্মকাণ্ড ও আইডিআরএ’র তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে নানাভাবেই বাধাগ্রস্ত করে আসছেন সোনালী লাইফের কর্মকর্তারা।

অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তহবিল থেকে বের করে নেওয়া অর্থের পরিমাণ মোট ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা। এর মধ্যে পরিচালকদের নামে শেয়ার ক্রয় করতে তহবিল থেকে নেওয়া হয়েছে ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বাকি টাকার মধ্যে জমি/ভবন ক্রয়ের অগ্রিম দেখিয়ে অবৈধভাবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা। সোয়েটার ক্রয়, আপ্যায়ন, ইআরপি মেইনটেন্যান্স বাবদ মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা।

এছাড়া নিজ পরিবারের সদস্য পরিচালকদের মাসিক বেতন বাবদ নেওয়া হয়েছে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অবৈধভাবে বিলাসবহুল অডি কার ক্রয়ে খরচ করা হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। নিজ পরিবারের সদস্য পরিচালকদের অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ১০ হাজার ৭৫০ টাকা। বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ ব্যয় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮০০ টাকা। গ্রুপ বিমা পলিসি থেকে ড্যানিয়েলকে অবৈধ কমিশন দেওয়া হয়েছে ৯ লাখ টাকা।

ঋণ সমন্বয়, অনুদান, এসি ক্রয়, কোরবানির গরু ক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ, পলিসি নবায়ন উপহার, আইপিও খরচের নামে নেওয়া হয়েছে ৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৯ টাকা। অফিস ভাড়ার নামে ড্রাগন আইটিকে প্রদান ১১ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ১৭ টাকা। সম্পূর্ণ ইম্পেরিয়েল ভবনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ১ কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ২২৩ টাকা। ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডের ট্যাক্স পরিশোধ ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ

বিমা কোম্পানিটির আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর হুদাভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং-কে নিয়োগ করে আইডিআরএ। আইডিআরএ’র চিঠিতে সোনালী লাইফের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির জন্য উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ১ কোটি ৫ লাখ শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন নগদ অর্থের বিনিময়ে উক্ত শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন প্রদান করে।

কিন্তু পরিচালক নূর এ হাফজা, ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, শাফিয়া সোবহান চৌধুরী ও শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েল এর নিকট থেকে কোনো টাকা গ্রহণ না করেই তাদের নামে প্রতিটি ১০ টাকা হারে মোট ৯ লাখ ১৬ হাজার ৫০ হাজার টাকার শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে। অন্যদিকে, মায়া রাণী রায়, আহমেদ রাজীব সামদানী ও হোদা আলী সেলিমের নিকট থেকে শেয়ার প্রতি ২০ টাকা মূল্য গ্রহণ করা হয়েছে।

কোম্পানির এফডিআর এর বিপরীতে সাউথ বাংলা ব্যাংকে বিনা প্রয়োজনে এসওডি হিসাব খুলে ঋণের ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে এবং একই ব্যাংকে কোম্পানির সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকাসহ মোট ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। পরে একই ব্যাংকে কোম্পানির আরেকটি হিসাবে জমা করা হয়। এই টাকা উল্লেখিত পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের মূল্য হিসেবে দেখানো হয়।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তার ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান ও মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার নিকট থেকে ২৬ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার, মোস্তফা কামরুস সোবহানের স্ত্রী শাফিয়া সোবহান চৌধুরীর নিকট থেকে ৩ লাখ শেয়ার, তাসনিয়া কামরুন অনিকার স্বামী শেখ মোহম্মদ ড্যানিয়েলের নিকট থেকে ১২ লাখ এবং ফজিলাতুননেসা রুপালী ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে ৬ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার লাভ করে পরিচালক হন।

পরবর্তী সময়ে মোস্তফা গোলাম কুদ্দস ১৪ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার তার মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়াকে ও ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার স্ত্রী ফজিলাতুননেসাকে এবং শাফিয়া সোবহান চৌধুরী তার স্বামী মোস্তফা কামরুস সোবহানকে ৬ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার হস্তান্তর করে কোম্পানির আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনের ৯০(জে) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শেয়ার বজায় রাখেন।

এর মাধ্যমে পরিবারের ৭ জন সদস্য কোম্পানির বোর্ডে পরিচালক রেখে পারিবারিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি ও কম্যুনিকেশন লিমিটেড, ড্রাগন সোয়েটার লিমিটেড, ইম্পেরিয়াল সোয়েটার লিমিটেড ও ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডকে বিভিন্ন সময়ে ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

আইডিআরএ’র অনুমোদনের আগে এ ধরনের টাকা পরিশোধ অবৈধ। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানির ১৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে প্রদান করা হয়েছে এবং জমি/ভবন ক্রয়ের অগ্রিম হিসেবে বৈধতা দেয়ার অপপ্রয়াস নেয়া হয়েছে।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস প্রতি মাসে ৩ কোটি টাকা হিসেবে মোট ১৮ কোটি টাকা নিয়েছেন। এই টাকা তিনি নিয়েছেন তার নিজের প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটারের নামে। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই তিনি অবৈধভাবে এসব টাকা নিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সোনালী লাইফের এফডিআর এর বিপরীতে প্রথমে ঋণ নেওয়া হয় ১৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। পরে এই টাকা থেকে ৮৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কোম্পানির একাউন্ট থেকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে সর্বশেষ জমা করা হয়েছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। বোর্ড সভার কার্যবিবরণীর জাল উদ্ধৃতাংশ দাখিল করে এরই লেনদেন করা হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এমএএস/এসএনআর/জেআইএম

Read Entire Article