আইনজীবী সমিতির ‘ঘুস নির্ধারণ’ বিতর্ক, সভাপতি-সম্পাদককে শোকজ

5 hours ago 6

শরীয়তপুর আদালতের পেশকারকে ঘুসের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়ার ঘটনায় আইনজীবী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুল হাসানকে কারণ দর্শানের নোটিশ দিয়েছেন আদালত। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।

রোববার (১৬ মার্চ) জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল বাশার মিঞা সই করা নোটিশে তাদের শোকজ করা হয়।

আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, গত ৬ মার্চ দুপুর ২টায় সমিতি ভবনে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সভা হয়। সভায় সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম সভাপতিত্ব করেন। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান। সভায় আলোচনার ভিত্তিতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে পেশকারকে সিআর ফাইলিংয়ে ১০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া জিআর বা সিআর যে কোনো দরখাস্তের জন্য ১০০ টাকা, জামিননামা দাখিলের জন্য ১০০-২০০ টাকা, গারদখানায় ওকালতনামায় সইয়ের জন্য ১০০ টাকা, সিভিল ফাইলিংয়ে ২০০ টাকা ও হলফনামায় ১০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এই সিদ্ধান্তের রেজ্যুলেশন কপি জজকোর্ট, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পেশকার, পিয়ন এবং কোর্ট পুলিশের জিআরওদের কাছে বিতরণ করা হয়। এটি আইনজীবীদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে উন্মুক্ত রাখা হয়। আইনজীবী সমিতির এই সিদ্ধান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। আদালতের কর্মচারীদের উৎকোচ নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে রোববার শরীয়তপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাশার মিঞা সই করা দুটি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। একটি দেওয়া হয় আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে, আরেকটি দেওয়া হয় সাধারণ সম্পাদককে। আর অনুলিপি দেওয়া হয় জেলা ও দায়রা জজকে।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ মার্চ আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আদালতের পেশকার, পিয়ন ও জিআরওদের (সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা) কাছ থেকে মামলা দায়ের, দরখাস্ত, জামিননামা দাখিল এবং গারদখানায় ওকালতনামা সইয়ের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণের হার নির্ধারণ করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দেয়।

এতে বলা হয়, পরিমাণ যাই হোক না কেন, ঘুস গ্রহণ ও প্রদানের যাবতীয় উদ্যোগ সমানভাবে বেআইনি ও নিন্দনীয়। বিচার বিভাগ যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছে, তখন এ ধরনের বেআইনি ও নৈতিকতা বিবর্জিত কার্যবিবরণী আইন পেশাকে কলুষিত করেছে এবং বিচার বিভাগের মর্যাদাহানি ঘটিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, “আমরা দুর্নীতি বন্ধের জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আদালতের সঙ্গে আমরা আইনজীবীরাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে আছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তিন দিনের মধ্যেই লিখিতভাবে শোকজের জবাব দেবো।”

সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেম বলেন, ‘সেদিন এ ধরনের কোনো রেজ্যুলিউশন আমরা নেইনি। সাধারণ সম্পাদকের অসাবধানতাবশত একটি নোটিশ পেশকারদের কাছে গেছে। এটা কোনো রেজ্যুলেশন ছিল না এবং আমাদের সিদ্ধান্তের বিষয়বস্তু নয়। এজন্য সাধারণ সম্পাদক দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একটি মহল এটি অহেতুক ভাইরাল করেছে।’

বিধান মজুমদার অনি/এসআর/জিকেএস

Read Entire Article