আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ—কোথায় কোনটা পড়বেন? জেনে নিন
দৈনন্দিন ইবাদত, দোয়া বা সাধারণ ভালো কাজ—সবকিছু শুরু করার ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই দুটি বাক্য ব্যবহার করি: ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। কিন্তু কোন জায়গায় কোনটি পড়তে হয়, এ নিয়েই অনেক মুসলমানের মাঝে বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ সব কাজেই বিসমিল্লাহ পড়ে ফেলেন, কেউ আবার প্রয়োজনহীন জায়গায় আউজুবিল্লাহ পড়ে থাকেন। অথচ কোরআন ও হাদিসে এই দুটি দোয়া পাঠের স্পষ্ট নির্দেশনা, সুন্নত ও শিষ্টাচার বর্ণিত আছে। কোথায় কোনটা পড়তে হবে, কখন পড়া সুন্নত, কখন ওয়াজিব, আর কোন জায়গায় এগুলো পড়া প্রমাণসম্মত নয়—এসব জানলে ইবাদত যেমন শুদ্ধ হবে, তেমনি দৈনন্দিন আমলও বরকতময় হবে। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নিই— বিসমিল্লাহ এ ক্ষেত্রে সংক্ষেপে বলা যায়, প্রতিটি বৈধ ও ভালো কাজ আল্লাহর নামে শুরু করার জন্য ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ করা সুন্নত ও বরকতের উৎস। হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক কথা বা কাজ যা আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) ছাড়া শুরু করা হয়, তা লেজবিহীন বা অসম্পূর্ণ (বরকতশূন্য)।’ (মুসনাদে আহমাদ, ১৪/৩২৯) অন্যদিকে, ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পাঠ করা হয় মূলত শয়তানের ক
দৈনন্দিন ইবাদত, দোয়া বা সাধারণ ভালো কাজ—সবকিছু শুরু করার ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই দুটি বাক্য ব্যবহার করি: ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। কিন্তু কোন জায়গায় কোনটি পড়তে হয়, এ নিয়েই অনেক মুসলমানের মাঝে বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ সব কাজেই বিসমিল্লাহ পড়ে ফেলেন, কেউ আবার প্রয়োজনহীন জায়গায় আউজুবিল্লাহ পড়ে থাকেন। অথচ কোরআন ও হাদিসে এই দুটি দোয়া পাঠের স্পষ্ট নির্দেশনা, সুন্নত ও শিষ্টাচার বর্ণিত আছে।
কোথায় কোনটা পড়তে হবে, কখন পড়া সুন্নত, কখন ওয়াজিব, আর কোন জায়গায় এগুলো পড়া প্রমাণসম্মত নয়—এসব জানলে ইবাদত যেমন শুদ্ধ হবে, তেমনি দৈনন্দিন আমলও বরকতময় হবে।
চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নিই—
বিসমিল্লাহ
এ ক্ষেত্রে সংক্ষেপে বলা যায়, প্রতিটি বৈধ ও ভালো কাজ আল্লাহর নামে শুরু করার জন্য ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ করা সুন্নত ও বরকতের উৎস।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক কথা বা কাজ যা আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) ছাড়া শুরু করা হয়, তা লেজবিহীন বা অসম্পূর্ণ (বরকতশূন্য)।’ (মুসনাদে আহমাদ, ১৪/৩২৯)
অন্যদিকে, ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পাঠ করা হয় মূলত শয়তানের কুমন্ত্রণা ও মন্দ প্রভাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় লাভের জন্য। এটি পাঠের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট স্থান হাদিস ও কোরআন দ্বারা প্রমাণিত, যা নিচে আলোচনা করা হলো—
কোরআন তিলাওয়াত শুরুর ক্ষেত্রে
কোরআন তিলাওয়াত শুরুর আগে ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠ করা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ ওয়াজিব। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ‘সুতরাং যখন তুমি কোরআন পাঠ করবে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ (সুরা নাহল: ৯৮)
এ ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, কোনো সুরার প্রথম থেকে তিলাওয়াত শুরু করলে, প্রথমে ‘আউজুবিল্লাহ’ এবং এরপর ‘বিসমিল্লাহ’ (সুরা তাওবা ব্যতীত) উভয়ই পাঠ করতে হবে। আর যদি কোনো সুরার মাঝখান থেকে পড়া হয়, তাহলে শুধু ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠ করাই যথেষ্ট।
নামাজের মধ্যে
নামাজের ভেতরে সানা পড়ার পর এবং সুরা ফাতিহা বা অন্য কোনো সুরা শুরুর আগে ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠের নিয়ম রয়েছে। অর্থাৎ, তাকবিরে তাহরিমার পর সানা পড়তে হয়, এরপর ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ এবং তারপর ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে সুরা ফাতিহা শুরু করতে হয়।
খারাপ স্বপ্ন দেখলে
খারাপ স্বপ্ন শয়তানের প্রভাব থেকে আসে। এমন স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাঁ দিকে থুতু দেবে। আর তিনবার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাইবে (অর্থাৎ আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম পাঠ করবে)। এরপর যে পার্শ্বে শুয়ে ছিলে, তা পরিবর্তন করে শয়ন করবে।’ (মুসলিম : ২২৬২)
রাগ ও কুমন্ত্রণা দেখা দিলে
যখন কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত রাগান্বিত হন, তখন শয়তান তাকে প্ররোচিত করে। এই সময় শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচতে ‘আউজুবিল্লাহ’ পাঠ করা সুন্নত। (বোখারি : ৩২৮২)
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আরাফ : ২০০)
যেসব ক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আউজুবিল্লাহ’ কোনোটিই নয়
দ্বীনি আলোচনা বা খুতবার শুরুতে প্রচলিত সুন্নত নিয়ম হলো আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) ও সালাত (দরুদ) দ্বারা শুরু করা। এ ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ বা আউজুবিল্লাহ দিয়ে শুরু করার কোনো শক্তিশালী প্রমাণ হাদিস বা সাহাবাদের আমল দ্বারা পাওয়া যায় না। আজান ও নামাজও আল্লাহু আকবার (তাকবির) বলে শুরু করাই নিয়ম।
এসব জায়গার ক্ষেত্রে হাদিসে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। তাই আমরা যারা এমনটা করে থাকি. তারা আজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
লেখক : সিনিয়র মুহাদ্দিস, চিকনাগুল আজিজিয়া মাদ্রাসা, জৈন্তাপুর, সিলেট
What's Your Reaction?