আওয়ামী দুর্নীতিবাজদের তথ্য দিতেই যত আপত্তি দুদক জিআর শাখার

3 hours ago 4

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর বিগত সরকারের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে নিয়মিতই মামলা দায়ের করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসছে দুর্নীতিবাজদের বিপুল সম্পত্তির খতিয়ান।

এর মধ্যে তাদের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধের আবেদন করছে দুদক। কেননা, সম্পত্তি হাতবদল হয়ে গেলে মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারকাজ সম্পন্ন করার পর এসব সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ হলেও তখন সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না।

ফলে প্রায় প্রতিদিনই দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে বিভিন্ন প্রভাবশালী দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির বিপুল সম্পদ জব্দের আদেশ দিচ্ছেন ঢাকার আদালত। প্রকাশ্য আদালতেই এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্তদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশও দেওয়া হচ্ছে প্রায় নিয়মিত।

আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে। দুর্নীতিবাজদের সম্পদ জব্দ, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও তাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা ইত্যাদির তথ্য দেওয়া যাবে না।- বলছেন জিআর কর্মকর্তারা

প্রকাশ্য আদালতে এসব মামলার শুনানি হলেও সাংবাদিকদের তথ্য দিতেই যেন যত আপত্তি ঢাকার আদালতে অবস্থিত দুর্নীতি দমন কমিশনের সাধারণ নিবন্ধন (জি.আর) শাখার কর্মকর্তাদের। তাদের বক্তব্য, ‘আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে। দুর্নীতিবাজদের সম্পদ জব্দ, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও তাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা ইত্যাদির তথ্য দেওয়া যাবে না।’

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জাগো নিউজকে বলেন, দুর্নীতিবাজদের যেসব সম্পদ জব্দ হয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা কতগুলো হলো এসব তথ্য না দেওয়ার কারণ, এখন যারা দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর আছে, তারা তো স্বৈরাচারের দোসর। এজন্য দুর্নীতিবাজদের তথ্য দিতে চায় না। শিগগির দুদকে নতুন পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, এখন যাদের সম্পদ জব্দ হচ্ছে, তারাই তো এই ১৫ বছর এদের (দুদক জিআরের কর্মকর্তা) চাকরি দিয়েছে। এরা বদলি হয়ে অন্য জায়গায় গেলেও একই কাজ করবে। দুদকের জিআর শাখার উচিত সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়া, যেন দেশবাসী এসব দুর্নীতিবাজদের সম্পত্তির প্রকৃত তথ্য জানতে পারে।

এখন যাদের সম্পদ জব্দ হচ্ছে, তারাই তো এই ১৫ বছর এদের (দুদক জিআরের কর্মকর্তা) চাকরি দিয়েছে। এরা বদলি হয়ে অন্য জায়গায় গেলেও একই কাজ করবে।- আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম

এদিকে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আদালতের সব শাখাসহ সারাদেশের সব দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের রদবদল হলেও বহাল তবিয়তে আছেন ঢাকার আদালতে অবস্থিত দুদক জিআরের কর্মকর্তারা। সেখানে আগেকার মতোই দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন) পদে আমিনুল ইসলাম ও আদালত পরিদর্শক পদে আমির হোসেন বহাল আছেন। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের নেওয়া বিচারিক কার্যক্রমের তথ্য দিতেই এই কর্মকর্তাদের যত আপত্তি।

আরও পড়ুন

আদালতে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক জানান, পতিত সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে দুদকের নেওয়া বিচারিক কার্যক্রমের তথ্য চাইতে গেলেই মুখ কালো হয়ে যায় দুদকের আদালত পরিদর্শক আমির হোসেনের।

পতিত সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে দুদকের নেওয়া বিচারিক কার্যক্রমের তথ্য চাইতে গেলেই মুখ কালো হয়ে যায় দুদকের আদালত পরিদর্শক আমির হোসেনের।- বলছেন আদালতে কর্মরত সাংবাদিকরা

দুর্নীতির তথ্য না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আমির হোসেন বলেন, আমাদের কাছে তথ্য থাকলেও দিতে পারবো না। কিছুদিন আগে ট্রেনিং থেকে এসেছি। সেখানে সাংবাদিকদের তথ্য না দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

এ বিষয়ে জানতে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম ও কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এমআইএন/এমকেআর/এমএস

Read Entire Article