আকস্মিক বন্যায় চলনবিলে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন

3 months ago 7

রবিশস্য আবাদ সরিষা তুলে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মাগুড়াবিনোদ এলাকার কৃষক মো. আজগার আলী সাত বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ জাতের বোরো ধানের আবাদ করে ছিলেন। ঈদের পরপরই সে ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তার জমির ধান ডুবে যাচ্ছে। এতে করে ওই কৃষকের পরিবারের বার্ষিক খোরাকির ধানও জুটবে না এমনি ভাষ্য তার।

এদিকে কোমর সমান পানিতে উচ্চমূল্যের পারিশ্রমিক দিয়ে কৃষি শ্রমিকরা কিছু ধান কেটে পলিথিনের নৌকা বানিয়ে নিকটবর্তী পাকা সড়কে ধান তুললেও অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার এ অঞ্চলের অনেকে শ্রমিক না পেয়ে ডুবে যাওয়া জমির এক মুঠো বোরো ধান কাটতেও পারছেন না। তবে আগাম জাতের বোরো ধান আবাদ করা কৃষকেরা আকস্মিক বন্যার ১২ থেকে ১৫ দিন পূর্বেই ধান কাটা শেষ করেছেন। এখন ডুবে যাওয়া ধান নিয়ে যত ভোগান্তি নাবি বোরো আবাদি কৃষকদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের আকস্মিক বন্যায় চলনবিলের খাদ্যশস্য ভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া এলাকার নিচু জমিতে বোরো ধান ডুবছে। সারিয়ার আবাদের পর বোরো আবাদ করা প্রত্যন্ত বিলের কৃষকদের হাজার হাজার বিঘা জমির পাকা ও আধা পাকা বোরো ধান কোথাও তলিয়ে গেছে বা কোথাও হাবুডুবু খাচ্ছে। মিলছে না প্রয়োজনীয় ধান কাটার কৃষি শ্রমিক। আবার কোমর সমান বোরো ধানের জমিতে ধান কাটতে ধান কাটা যন্ত্র হারভেস্টারও কাজ করছে না, যা নিয়ে পশ্চিম চলনবিল অঞ্চলের নাবি জাতের ধানের আবাদ করা কৃষকেরা মুখের ভাত নষ্ট হওয়ায় তাদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। 

তাড়াশের ঘরগ্রাম এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, তাড়াশ উপজেলার সদর, সগুনা, মাগুড়াবিনোদ ও নওগাঁ ইউনিয়ন এলাকার কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের পাকা বোরো ধানের জমিতে এখন হাঁটু বা কোমর সমান পানি আছে। যাদের ঈদ নেই। বরং তারা জমির ধান কাটতে কৃষি শ্রমিক, হারভেস্টারের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।

সগুনা এলাকার কৃষক আবু হাশিম বলেন, চলনবিলের ৮টি উপজেলা এলাকায় আবাদ করা সব কৃষকের একই অবস্থা। কেননা, ধান পাকতে দেরি হওয়াও এ বছর জ্যেষ্ঠ মাসেই আকস্মিক বন্যায় কৃষকরা কষ্টার্জিত বোরো ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। 

উপজেলার কুন্দইল এলাকার কৃষক মো. আয়নাল মন্ডল বলেন, বর্তমানে পানিতে জমির ধানের শিষ জেগে আছে এমন জমির ধান কাটতে বিঘায় ৯৫০০ থেকে ১০ হাজার, হারভেস্টারে বিঘা প্রতি ৪৫০০ থেকে ৫৫০০ এবং দিন হাজিরা প্রতি শ্রমিক ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। পাশাপাশি চলমান এ দুর্যোগের মুহূর্তে যে পরিমাণ কৃষিশ্রমিক বা হারভেস্টার প্রয়োজন তা মিলছে না। 

তিনি আরও জানান, পাকা বোরো ধান চোখের সামনে ডুবতে দেখে চলনবিলের ৮টি উপজেলা এলাকার ১৫ থেকে ২০টি ইউনিয়ন এলাকার শত শত কৃষকের দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কারণ, সোমবার বিকাল পর্যন্ত বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যবহৃত থাকায় সোনালি স্বপ্ন পাকা বোরো ধান রক্ষা করতে না পেরে কৃষকরা অনেকেই কাঁদছেন।

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই। তারপরও যতটুকু পারা যায় জমির পাকা ধান ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের চেষ্টা চালিয়ে যাবার পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।

Read Entire Article