চারদিনে উড়োজাহাজ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে স্কুলছাত্র রাহুল শেখ। তার তৈরি উড়োজাহাজ সফলভাবে আকাশে উঠেছে। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে রাহুলের বানানো উড়োজাহাজ দেখতে ভিড় করছেন মানুষ।
রাহুল শেখ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বারমল্লিকা গ্রামের শামসুল শেখের ছেলে। সে স্থানীয় রামদিয়া বেনীমাধব বিপিনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
এর আগে রাহুল আরেকটি উড়োজাহাজ তৈরি করলেও অতিরিক্ত ওজনের কারণে সেটি উড়াতে ব্যর্থ হয়। সে সময় রাহুলকে নিয়ে হাসাহাসি করে স্থানীয়রা। তবে এবার মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করে চারদিনের ব্যবধানে সফল হয় সে।
রাহুলের যতটা না লেখাপড়ায় মনোযোগ তার চেয়ে বেশি মনোযোগ যন্ত্রাংশ নিয়ে। সুযোগ পেলে ঘরের ভেতর বিভিন্ন ডিভাইস ও যন্ত্রাংশ তৈরি করতে বসে যেতো। যার কারণে প্রায় বকুনি খেতো বাবা-মায়ের। তবে এবার ইউটিউব দেখে উড়োজাহাজ তৈরিতে হাত দেয় রাহুল। মাঠে কাজ ও মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন ডিভাইস কিনে সে।
রাহুল জানায়, অনলাইন থেকে অর্ডার করে আনা ব্যাটারি ও একাধিক মোটরসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের সাহায্যে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৭৮৭ ’অচিন পাখি’ মডেলের উড়োজাহাজটি তৈরি করি। এটা রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আকাশে উড্ডয়নের পর দৈর্ঘ্য ও উচ্চতার উভয় দিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় চলাচল করে। এছাড়াও রাহুল উড়োজাহাজ, ফাইটার উড়োজাহাজ, স্পিডবোট, টিজারগান, সাউন্ডবক্স, ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন ডিভাইস তৈরি করেছি।
স্থানীয়রা জানায়, রাহুলের যতটা না লেখাপড়ায় মনোযোগ তার চেয়ে বেশি মনোযোগ যন্ত্রাংশ নিয়ে। সুযোগ পেলে ঘরের ভেতর বিভিন্ন ডিভাইস ও যন্ত্রাংশ তৈরি করতে বসে যেতো। যার কারণে প্রায় বকা খেতো বাবা-মায়ের। তবে এবার ইউটিউব দেখে উড়োজাহাজ তৈরিতে হাত দেয় রাহুল। মাঠে কাজ ও মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন ডিভাইস কিনে সে।
রাহুলের বাবা শামসুল শেখ বলেন, ‘পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে রাহুল সবার ছোট। ক্লাস নাইনে পড়াশোনা করে সে। বিভিন্ন সময় ওকে কাজের জন্য মাঠে ডাকলেও সেখানে না গিয়ে এসব বানাতে থাকে। অনেক রাগারাগি করেও তাকে কাজে নিতে পারিনি। দেখি রাহুল দুটি উড়োজাহাজসহ অনেক কিছু তৈরি করছে। প্রথমে বানানো উড়োজাহাজটা অল্প একটু উড়ে ওজনের কারণে পড়ে যায়। পরে আরেকটি উড়োজাহাজ বানাতে বলি। সে আরেকটি উড়োজাহাজ বানায়। সে উড়োজাহাজটি এখন আকাশে উড়ে অনেক দূর যায়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে আমার ছেলের তৈরি করা উড়োজাহাজ দেখতে।’
এটা উড়োজাহাজ বানাতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। দিনরাত কাজ করে চারদিনে এটি বানিয়েছি। এ উড়োজাহাজটি দৈর্ঘ্যে প্রায় এক কিলোমিটার এবং উপরেও প্রায় এক কিলোমিটার ওঠে। রিমোটের সাহায্যে এটি কন্ট্রোল করা যায়। সহযোগিতা পেলে এটি বড় পরিসরে করা সম্ভব।
রাহুল শেখ জানায়, ‘ছোটবেলার শখ উড়োজাহাজ বাড়িয়ে আকাশে উড়াবো। সে স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমি কাজ করতে থাকি। এসবের খরচ মেটাতে মাঠে কাজ করি। পরিবার থেকে সহযোগিতা নিয়ে অনলাইনে অর্ডার করি একটি রিমোট, কয়েকটি মোটর ও একটি ব্যাটারি। এ কাজ করতে গিয়ে পরিবার থেকে অনেক চাপের সম্মুখীন হই। তবে সব চাপ উপেক্ষা করে আমি একটি উড়োজাহাজ তৈরি করি। কিন্তু সেটির ওজন বেশি হওয়ায় উড়াতে পারি নাই। তখন অনেকে আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছে। পরে আরেকটি উড়োজাহাজ বানিয়ে আকাশে ওড়াতে সক্ষম হয়েছি।’
সে জানায়, ‘এটা উড়োজাহাজ বানাতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। দিনরাত কাজ করে চারদিনে এটি বানিয়েছি। এ উড়োজাহাজটি দৈর্ঘ্যে প্রায় এক কিলোমিটার এবং উপরেও প্রায় এক কিলোমিটার ওঠে। রিমোটের সাহায্যে এটি কন্ট্রোল করা যায়। সহযোগিতা পেলে এটি বড় পরিসরে করা সম্ভব। সরকার যদি আমাকে সুযোগ দেয় তাহলে আমি বড় কিছু করতে পারবো।’
রাহুলের বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক শংকর পোদ্দার বলেন, ‘আমাদের ছাত্র হওয়ার পরও জানতাম না ওর মধ্যে এতো প্রতিভা রয়েছে। নবম শ্রেণি থেকে সায়েন্স, আর্স ও কমার্স বিভক্ত হয়। রাহুলের আগ্রহ নিয়ে সাইন্সে ভর্তি হয়। প্রকৌশলী হবার ইচ্ছে তার।’
তিনি বলেন, ‘শুধু উড়োজাহাজ নয় ইতোপূর্বে রাহুল আরও অনেক কিছু তৈরি করেছে। যেগুলো উপস্থাপন করার মতো ছিল না। কিন্তু উড়োজাহাজ তৈরি করে উড্ডয়নের পর এখন সাড়া ফেলেছে। এটা আমাদের স্কুল ও রামদিয়া বাসীর গর্বের। প্রথমে ওর পরিবার দ্বিধায় থাকলেও এখন ওর পাশে আছে। আমরাও তাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা. আলিমুদ্দিন শেখ বলেন, ‘রাহুল খুব একটা সচ্ছল পরিবারের সন্তান না। ওর বাবা কৃষক। তারপরও সে অনেক টাকা খরচ করে বিমানসহ অনেক কিছু তৈরি করেছে। পরে এরকম ভালো কিছু তৈরি করতে চাইলে আমাদের স্কুলের পক্ষ থেকে ওকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। আমি আশা করছি সরকারি ও বেসরকারিভাবে এসব বিষয় নিয়ে যারা কাজ করেন তারা রাহুলের সহযোগিতা এগিয়ে আসবে।’
আরএইচ/জিকেএস