গত শুক্রবার (সৌদি আরবে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি) মসজিদুল হারামে জুমার নামাজ পড়ান শায়খ আবদুল্লাহ আওয়াদ আল জুহানী।
তার জন্ম ১৯৭৬ সালের ১৩ই জানুয়ারি সৌদি আরবের মদিনায়। তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরআন অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট (পিএইচডি) অর্জন করেছেন। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে মক্কার মসজিদে হারামের ইমাম হিসাবে নিযুক্ত হন।
গত শুক্রবারের জুমার খুতবায় তিনি বলেন:
মানুষের জন্য এই ক্ষণস্থায়ী জীবন ও জগত ছেড়ে আখেরাত বা পরজীবনে পাড়ি জমানো এক অনিবার্য ব্যাপার। রাহমানুর রাহিম আল্লাহ তাআলা দয়া করে তাঁর বান্দাদের কাছে আখেরাতের ব্যাপারে বার্তা পাঠিয়েছেন—যেন তারা আখেরাত সম্পর্কে জানতে পারে, তা কেমন হবে বুঝতে পারে এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।
কোরআনে এত সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে আখেরাতের বিবরণ দেওয়া হয়েছে যেন তা চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। জমিন তার রবের নুরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। প্রত্যেককে তার আমলের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে এবং তারা যা করে সে সম্পর্কে তিনিই সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। আর কাফেরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদের বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসুলগণ আসেননি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করত এবং এ দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তারা বলবে, হ্যাঁ, এসেছিল। কিন্তু (এ স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও) কাফেরদের প্রতি শাস্তির ফয়সালা অবধারিত হয়ে গেছে। (সুরা জুমার: ৬৮-৭৫)
ভায়েরা আমার! সুরা জুমারের এই আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। বুঝে নিন, এগুলোর তাৎপর্য কী—আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব, তাঁর ক্ষমতা ও পরিপূর্ণ ন্যায়বিচারকে উপলব্ধি করুন। সেই ভয়ানক মুহূর্ত চিন্তা করুন যখন সকল সৃষ্টিকে পুনরুত্থিত করে একত্র করা হবে, কেউ একচুলও নড়তে পারবে না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। সব গোপন কথা প্রকাশ পেয়ে যাবে।
সেদিন আল্লাহ অনুমতি না দিলে কেউ আপনার জন্য সুপারিশ করতে পারবে না। তাই সময় থাকতে ইবাদত, বিনয় ও আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। তিনি অত্যন্ত নিকটে, বান্দার গলার শিরার চেয়েও কাছাকাছি। তাঁর আরশ আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে, আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
সুতরাং শুধু আল্লাহর কাছেই আশা রাখুন। তাঁর অসীম দয়া ও ক্ষমতার ওপরই ভরসা রাখুন। তিনিই কষ্ট থেকে উদ্ধার করেন, অসহায়দের ডাকে সাড়া দেন। তাঁর কাছেই রিজিক চান—কারণ আসমান-জমিনের মালিক একমাত্র তিনিই। তাঁর দিকেই ফিরুন সত্য অন্তর নিয়ে। কারণ তিনিই চূড়ান্ত আশ্রয়স্থল এবং সেই প্রকৃত বাদশাহ যার দিকে সবাইকে ফিরে যেতে হবে।
(উল্লেখ্য, এটি মসজিদুল হারামের জুমার খুতবার পূর্ণ রূপ নয়; খুতবার নির্বাচিত কিছু অংশ অনুবাদ করা হয়েছে।)
সূত্র: ইনসাইড দ্যা হারামাইন
ওএফএফ