আখ্যান: সাহিত্যের নতুন আঙিনা ও কণ্ঠস্বর

21 hours ago 5

ক্ষুদিরাম দাস

কবি নুরুন্নাহার মুন্নির সম্পাদনায় প্রকাশিত শিল্প-সাহিত্যের নিবেদিত কণ্ঠস্বর আখ্যানের ‘অরণ্য’ সংখ্যাটি অপরূপ সাহিত্য সম্ভার। যা ৫৬ জন কবির কবিতার অপূর্ব সমাহারে সমৃদ্ধ। সংখ্যাটি দেশের সাহিত্যের প্রাণবন্ত উপস্থিতিকে নতুন করে জানান দিয়েছে। এর মাধ্যমে সাহিত্যের ঐতিহ্য যেন নবতর ঢেউয়ে ভেসে উঠেছে। যা প্রমাণ করে আমাদের সাহিত্যিক সম্ভাবনার গভীরতা ও প্রসার। আখ্যানের প্রথম প্রয়াস দেশের সাহিত্যিকদের একত্রিত করে সুমহান পথের সূচনা করেছে। যেখানে কলমের কালি আর মনের ভাবনা মিলে সৃষ্টি করেছে অমর সৌন্দর্য।

‘অরণ্য’ ভাবনাটি নিঃসন্দেহে অপূর্ব দার্শনিক ও সাহিত্যিক প্রতীক। অরণ্য শুধু গাছপালা আর সবুজের সমারোহ নয়, এটি কবিদের কল্পনার অফুরন্ত খনি। যেখানে প্রকৃতি আর মানুষের মনের গভীর সম্পর্ক অমর হয়ে ওঠে। কোনো কবি বা সাহিত্যিকই অরণ্যের মায়াবী আহ্বান থেকে মুক্ত থাকেননি। অরণ্য বারবার ফিরে এসেছে তাদের সৃষ্টির কেন্দ্রে। ‘অরণ্য’ সংখ্যার কবিরাও এ ঐতিহ্যের ধারক। তারা অরণ্যের গভীর ভাবনাকে অপূর্বভাবে উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি কবিতায় যেন অরণ্যের সবুজ ছায়া, পাখির কলকাকলি আর প্রকৃতির গভীর নিঃশ্বাস জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কবিতাগুলো শুধু শব্দের খেলা নয় বরং প্রকৃতি ও মানুষের গভীর সম্পর্কের কাব্যিক রূপ।

কবি নুরুন্নাহার মুন্নির সম্পাদনার দক্ষতা এ সংখ্যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার নেতৃত্বে আখ্যান যেন সাহিত্যিক মঞ্চে পরিণত হয়েছে। যেখানে নতুন-পুরোনো কবিরা একত্রিত হয়ে তাদের সৃষ্টির জাদু ছড়িয়েছেন। তার এ প্রয়াস শুধু একটি সাময়িকীর প্রকাশ নয়; বরং সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার এক অগ্রগামী পদক্ষেপ। নুরুন্নাহার মুন্নির সাথে জড়িত প্রতিটি সাহিত্যিক ও সহযোগী এ কাজে সমানভাবে নিবেদিত। তাদের কঠোর পরিশ্রম, সৃজনশীলতা এবং অঙ্গীকার সংখ্যাকে স্মরণীয় সাহিত্যিক নিদর্শন করে তুলেছে।

আরও পড়ুন
দেশে বিদেশে: মানুষ যেখানে মানচিত্রের চেয়ে বড়
হ‌ুমায়ূন আহমেদের ‘১৯৭১’: অনন্য সৃষ্টি

অরণ্য কেবল প্রকৃতি নয়, জীবনের গভীর দর্শন। সংগ্রাম আর মুক্তির প্রতিচ্ছবি। যুগ যুগ ধরে কবিদের মননে স্থান পেয়েছে। অরণ্য সব সময়ই রহস্য, আশ্রয় আর সৃষ্টির প্রতীক। কবিরা অরণ্যের ভাবনাকে নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করেছেন। তাদের কবিতায় অরণ্য কখনো প্রেমের উপমা, কখনো বিষাদের আশ্রয় আবার কখনো মুক্তির প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি রচনায় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের হৃদয়ের গভীর সংযোগ ফুটে উঠেছে। নুরুন্নাহার মুন্নির সম্পাদনায় এ সংখ্যা একটি সাহিত্যিক আন্দোলন। সাহিত্যের প্রাণশক্তি ও সম্ভাবনাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে। মানুষের মনের অচিন্তিত পথ, স্বপ্নের অগম্য গভীরতা আর সৃজনশীলতার অপার সম্ভাবনার প্রতীক। এ সংখ্যা প্রমাণ করে, সাহিত্যের মাধ্যমে অরণ্যের সৌন্দর্য ও গভীরতা চিরন্তন হয়ে থাকে।

এই সংখ্যায় সুমন কুমার দত্তের ‘অরণ্য আমায় ডাকে’ প্রকৃতি ও মানুষের অস্তিত্বের গভীর সম্পর্কের কাব্যিক প্রকাশ। ম. নুরে আলম পাটোয়ারীর ‘অরণ্য-জীবন’ আধুনিক জীবনের দ্বন্দ্ব, বিচ্ছিন্নতা এবং প্রকৃতির মাঝে মুক্তির সন্ধানের কাব্যিক প্রকাশ।নুরুন্নাহার মুন্নির ‘জং ধরা ট্রাকের গান’ মানুষের গভীর কষ্ট, অভিমান এবং আধুনিক জীবনের যান্ত্রিকতার মধ্যে মুক্তির সন্ধানের আবেগময় প্রকাশ। আশিক বিন রহিমের ‘অরণ্য’ প্রকৃতির সৌন্দর্য, ক্ষয় এবং আধুনিকতার আগ্রাসনের ফলে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন ও সম্পদের করুণ চিত্র। কাদের পলাশের কবিতা ‘খুন ও অরণ্য’ মানুষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সমাজের অন্যায় ও প্রকৃতি ধ্বংসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। আমিনুল ইসলামের ‘সুন্দরবনের সুরসভায়’ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সুরের কাব্যিক উদযাপন।

এভাবে প্রত্যেকটি কবিতায়ই কবিদের কল্পনা-ভাবনায় ‘অরণ্য’ স্থান পেয়েছে। আখ্যানের প্রথম সংখ্যা শুধু একটি ছোটকাগজ নয়, বাংলাদেশের সাহিত্য সম্ভাবনার জ্বলন্ত প্রদীপ। এটি প্রমাণ করে, সাহিত্যের মাধ্যমে বড় কিছু গড়ে তোলার স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এ সংখ্যার মাধ্যমে কবি ও সাহিত্যিকরা দেখিয়ে দিয়েছেন, তারাই পথপ্রদর্শক, যারা কলমের শক্তিতে নতুন দিগন্ত রচনা করতে পারেন। আখ্যানের ‘অরণ্য’ সংখ্যা সাহিত্যের ইতিহাসে সোনালি অধ্যায় হয়ে থাকবে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে নতুন পথে এগিয়ে যেতে। এ সাহিত্যযাত্রা যেন কখনও থামে না বরং আরও গভীর, আরও সমৃদ্ধ হয়ে চলতে থাকে; এ কামনাই রইলো।

এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article