আগের তুলনায় আরও পাঠকবান্ধব হোক

2 hours ago 4

রাসেদ শিকদার

বইমেলা শুধু একটি সাংস্কৃতিক উৎসব নয় বরং আমাদের সাহিত্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে পাঠকের হৃদয়ের যোগসূত্র তৈরি করে। এটি নতুন চিন্তা, নতুন জ্ঞান এবং নতুন লেখকের আবিষ্কারের জন্যও এক চিরন্তন মঞ্চ। তাই ২০২৬ সালের বইমেলাও যেন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আরও সুশৃঙ্খল, প্রাণবন্ত এবং পাঠকবান্ধব হয়—এটাই আমার কামনা।

প্রথমেই বলতে চাই, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও মাহে রমজানের বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি। নির্বাচনের প্রচারণা মেলার শুরুর সময় থেকেই জোরদার থাকবে এবং মেলার শেষভাগে রমজান শুরু হয়ে যাবে। তাই সময়সীমা একটু আগে এনে মেলাটি শেষ করা হলে পাঠক ও প্রকাশক উভয়ের জন্যই তা স্বস্তিদায়ক হবে। এতে একদিকে নির্বাচনকালীন ব্যস্ততার সাথে সংঘর্ষ এড়ানো যাবে, অন্যদিকে রোজার সময়ে পাঠক ও দর্শনার্থীদের জন্য অস্বস্তি তৈরি হবে না। এ ছাড়া এ ধরনের সময়সূচি মেলার আয়োজনকে আরও পরিকল্পিত এবং সব পক্ষের জন্য সমানভাবে সুবিধাজনক করবে।

মেলার স্থাপত্য এবং পরিবেশ নিয়েও কিছু প্রত্যাশা আছে। বিগত বছরগুলোতে পর্যাপ্ত স্টল লোকেশন ম্যাপ না থাকায় পাঠকদের সিলেক্ট করা প্রকাশনীর স্টল খুঁজে পেতে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। তাই পর্যাপ্ত স্টল লোকেশন ম্যাপ এবং দিকনির্দেশনা ফেস্টুন থাকা উচিত।

আরও পড়ুন

সিলেটের নীলক্ষেত: রাজা ম্যানশন যেন বইয়ের খনি
আশা-নিরাশার বইমেলা

অনেক সময় চারদিকে খোলা প্যাভিলিয়নের কারণে পাশের রাস্তা ও স্টলগুলো অসুবিধায় পড়ে। তাই নিয়ম অনুযায়ী দুই দিক খোলা এবং দুই দিক বন্ধ রাখার বিধি প্যাভেলিয়নগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা উচিত। এতে প্রতিটি প্রকাশক সমানভাবে তাদের বই প্রদর্শন ও বিক্রির সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া মেলার ভেতরে প্রবেশ ও চলাচলের পথ প্রশস্ত রাখা এবং পর্যাপ্ত বসার জায়গা নিশ্চিত করা গেলে পাঠকেরা স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাতে পারবেন। এ উদ্যোগ পাঠকদের মেলার প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়াবে। দর্শনার্থীরা প্রতিটি স্টল প্রদর্শন করে সংগ্রহ করতে পারবেন তাদের পছন্দের বইগুলো।

এবারের বইমেলা আমি চাই আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হোক। ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র, নতুন বইয়ের আপডেট স্ক্রিনে প্রদর্শন—এসব উদ্যোগ পাঠকদের জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দেবে।

সবশেষে আমার স্বপ্ন, এবারের বইমেলা শুধু বই বিক্রির উৎসব হয়ে না থেকে জ্ঞানচর্চার, নতুন লেখক সৃষ্টির এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক মহোৎসবে রূপ নিক। পাঠকের মনে বইয়ের প্রতি আরও গভীর টান তৈরি হোক, নতুন প্রজন্ম বইকে ভালোবাসতে শিখুক এবং বইমেলা হয়ে উঠুক আমাদের গর্ব ও ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতীক। পাশাপাশি এটি যেন দেশের সাহিত্যিক সমাজকে একত্রিত করার, নতুন চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করার এবং পাঠক-লেখক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার একটি অনন্য ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়।

লেখক: জাদুশিল্পী ও বাংলার মিস্টার বিন।

এসইউ/এমএস

Read Entire Article