‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা—যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা। যম যেমন হয় চিরজীবী, আমার ভাই যেন হয় তেমন চিরজীবী।’ এই মন্ত্রের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বাংলার ঘরে ঘরে উদযাপিত হবে ভাইফোঁটা।
কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি—বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি এক স্নেহভরা ও আনন্দময় দিন। বোনেরা এই দিনে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে তার দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করেন। ভাইয়েরাও প্রতিদানে বোনকে দেন ভালোবাসা, আশীর্বাদ ও রক্ষার প্রতিশ্রুতি।
পুরাণে বলা হয়, মৃত্যুর দেবতা যমের বোন যমুনা এই দিনেই ভাইকে ফোঁটা দিয়ে আহার করান। এই স্নেহ-ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে যম বোনকে আশীর্বাদ দেন—এই দিনে যার কপালে ফোঁটা পড়বে, মৃত্যুও তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। সেই বিশ্বাস থেকেই শুরু হয় ভাইফোঁটার প্রথা।
দীপাবলির দুই দিন পর পালিত এই উৎসব পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশেও সমান আবেগে উদযাপিত হবে। সময়ের সঙ্গে ধর্মীয় সীমানা ছাড়িয়ে এটি এখন হয়ে উঠেছে ভাই-বোনের ভালোবাসার সার্বজনীন উৎসব।
ভোরে স্নান-ধ্যান শেষে বোনেরা নতুন পোশাক পরে ফোঁটার থালা সাজান—চন্দন, দুধ, দই, চাল, সিঁদুর, ফুল, ফল ও মিষ্টি দিয়ে। কেউ কেউ আলপনা এঁকে থালায় রাখেন শুভ প্রতীক। এরপর ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে পাঠ করা হয় সেই ঐতিহ্যবাহী মন্ত্র—‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা...।’ ফোঁটার পর ভাইয়ের মুখে মিষ্টি তুলে দেওয়া হয়, আর ভাই বোনকে দেন ভালোবাসার উপহার—শাড়ি, চুড়ি, গয়না বা অর্থ।
শহরের ফ্ল্যাট থেকে গ্রামের উঠোন—সবখানেই বাজবে শঙ্খধ্বনি, ধূপের গন্ধে ভরে উঠবে ঘর-বাড়ি। বোনেরা হাতে ফোঁটার থালা নিয়ে অপেক্ষায়, ভাইয়েরা আসবে আশীর্বাদ নিতে।
দূরে থাকা ভাই-বোনরাও এখন ভিডিওকলে ফোঁটা দেয়, পাঠায় ভালোবাসার বার্তা। কেউ কেউ আয়োজন করেন অনলাইন ফোঁটার অনুষ্ঠানও।
ভাইফোঁটা শুধু ধর্মীয় নয়, এটি পারিবারিক বন্ধনের উৎসব। এই দিনে বোন শেখায় ভালোবাসার নিঃস্বার্থতা, ভাই শেখে যত্ন ও সুরক্ষার অঙ্গীকার। ব্যস্ত জীবনের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া পারিবারিক উষ্ণতাকে ফের জাগিয়ে তোলে এই দিনটি। মনে করিয়ে দেয়, রক্তের টানই মানুষের সবচেয়ে গভীর সম্পর্ক।