আজ বিশ্ব সাপ দিবস। মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, সাপের জন্য একটি দিন বরাদ্দ করা হলো কেন? আসলে সাপকে যতটা ভয়ংকর প্রাণী মনে করা হয়, সাপ ততটা ভয়ংকর নয়। বরং বলা যায় খানিকটা নিরীহ প্রাণী বটে। বিশ্বে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, তবে এর মধ্যে বিষধর সাপের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা।
গোবেচারা চেহারার এই সাপেদের জন্যই ১৬ জুলাই দিনটি পালন করা হয় সাপ দিবস হিসেবে। তবে সাপকে মানুষ ভয় পায় বলেই এই সাপ নিয়ে আছে নানান ভীতিকর গল্প-কাহিনি। কোনো বন্ধু বিশ্বাসঘাতকতা করলেই তাকে ‘সাপ’ বলে সম্বোধন করি। এছাড়া সাপ সম্পর্কে আমাদের সমাজে আরও অনেক নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে।
আধুনিক যুগে গবেষকরা অসংখ্য সাপের প্রজাতি সম্পর্কে জানতে পারার আগেই, সরীসৃপটিকে প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনিতে বহুবার পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ধর্মের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল সাপ। সনাতন ধর্মে সাপকে দেবতা মানা হয় এবং পূজা করা হয়। এছাড়া মিশরীয়রা সাপকে তাদের দেবতা মনে করত। যে কারণে কপালে সাপ একে রাখা, এমনকি সাপের আকৃতির নানান গয়না পরা তারা নিরাপদ মনে করত।
আইরিশ পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, পঞ্চম শতাব্দীতে সেন্ট প্যাট্রিক একটি পাহাড়ের চূড়ায় গিয়েছিলেন যেখানে তিনি ৪০ দিন উপবাস করেছিলেন। এ সময় তার ওপর সাপের আক্রমণ হয়। নিজেকে রক্ষা করার জন্য, তিনি তার কর্মীদের নির্দেশ দেন আয়ারল্যান্ডের সব সাপকে সমুদ্রে বিতাড়িত করতে। এ কারণেই নাকি আজও আয়ারল্যান্ড সাপমুক্ত। যদিও এটি সম্পূর্ণই একটি কল্পকাহিনি।
আরেকটি কিংবদন্তীতে, চীনারা বিশ্বাস করে পানির নিচে বিশাল আকৃতির সাদা সাপ বাস করে। যাদের তারা পানির দেবতা মনে করে। নিশ্চয়ই এমন অনেক চাইনিজ ড্রামাও দেখে ফেলেছেন। পানির সেই দেবতার সঙ্গে মানুষের প্রেম হয়। আসলে এই কল্প কাহিনি ও বিশ্বাস থেকে এসব নাটক তৈরি করে চীনারা।
তারা বিশ্বাস করে, পানির এক বিশাল সাদা সাপরূপী দেবী এক মানুষের প্রেমে পড়েন। এরপর তাকে বিয়ে করতে চলে চলে আসেন মানুসের দুনিয়ায়। পরে তাদের দুজনে একটি ছেলের জন্ম হয়। এক সন্ন্যাসী তখন লেকসাইড প্যাগোডার নিচে দেবীকে আটকে ফেলেন। পরে তিনি রাক্ষসে পরিণত হোন এবং মানুষকে আক্রমণ করতে থাকেন।
এই ধরনের লোককাহিনি প্রায়শই সাপকে নেতিবাচক হিসেবে দেখিয়েছে। সাপকে ভয়ংকর ও খারাপ প্রাণী হিসেবেই দেখানো হয়েছে নানান কল্প কাহিনি, সিনেমায়। এই ধারণা পাল্টাতেই মূলত সাপ দিবস পালন করা শুরু হয়।
গ্রীক পৌরাণিক কাহিনি মেডুসার পরিচয় দেয়, একজন দেবী যার চুল ছিল সাপের। অসংখ্য সাপ তার মাথায় কিলবিল করছে। ইংরেজি শব্দ ‘snake’ এসেছে প্রাচীন ইংরেজি শব্দ ‘snaca’ থেকে। সরীসৃপটি স্থলজ টিকটিকি থেকে এসেছে বলে মনে করা হয় যা প্রায় ১৭৪.১ মিলিয়ন থেকে ১৬৩.৫ মিলিয়ন বছর আগে বিদ্যমান ছিল। ইওফিস আন্ডারউডি হচ্ছে প্রাচীনতম জীবাশ্ম সাপ, প্রায় ১৬৭ মিলিয়ন বছর আগে ইংল্যান্ডে বাস করত।
কেএসকে/জিকেএস