শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। আগের কার্যদিবসের মতো বুধবারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এতে প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে প্রায় ২০০ পয়েন্ট। আর লেনদেন হয়েছে সাড়ে সাত’শ কোটি টাকার বেশি।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি। সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে ৭১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলো।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হলে শেয়ারবাজারে মন্দা অবস্থা দেখা দেয়। তার আগেও নানা ইস্যুতে শেয়ারবাজারে মন্দা চলছিলো। প্রায় চার মাস ধরে শেয়ারবাজার পতনের মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ হাসিনা সরকারের শেষ সময়টা মোটেও ভালো যায়নি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় শেয়ারবাজারেও লেনদেন বন্ধ থাকে একাধিক দিন। তবে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনের মুখে পড়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ
থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যান।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মঙ্গলবার দেশের সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারেও লেনদেন শুরু হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হয়। সেই সঙ্গে প্রায় এক মাস পর শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধানসূচক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শেষদিকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও বাড়ে।
তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় দাপট দেখিয়েছে ৭১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। লেনদেনের প্রায় সময়জুড়ে দিনের সর্বোচ্চ দামে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের বিপুল ক্রয় আদেশ আসে। বিপরীতে শূন্য হয়ে পড়ে বিক্রয় আদেশের ঘর। এই ৭১ প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি আরও শতাধিক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপন দেখায়।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৬৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৪টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২২ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৭৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ১০ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ৩৮ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রবি।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সিটি ব্যাংক, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, একমি ল্যাবরেটরিজ, ব্র্যাক ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেম, ইবনে সিনা এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৪৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৫৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৫টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
এমএএস/এমআরএম/জিকেএস