আসিফ আহমদ
মামা চলো খেয়ে নেই। ঢাকা, চট্টলার দীর্ঘ যাত্রায় খিদেটাও বুঝি বন্দরনগর হতে মহানগরে ছুট দিচ্ছে। মামা নিস্তব্ধ! কর্নপাতেও নিরুত্তর। মুহূর্ত পর কেদারা ছেড়ে, টেবিলে রাখা বাটা হতে এক খিলি পান মুখে পুরলো। মামার মুখে পান জাবর কাটার শব্দে এতক্ষণের নিস্তব্ধতা ভাঙলো যেন। আঁখি মুদে স্বচ্ছ কন্ঠে বলে উঠলেন, যেই রাস্তাটা দিয়ে মাত্র এলি, কেমন রে সেটা?
আমার উত্তরের তোয়াক্কা না করেই বক্তৃতা স্বরে বলা ধরলো পুনরায়।
‘শোন! এবার কিন্তু কিলো প্রতি দুই কোটি খরচ করেছি। সরকার বাজেট আরও কম দিতে চেয়েছিল, আমি সংসদে হুংকার দিয়ে ছিলাম, যদি আমার উত্থিত বাজেটের চেয়ে এক আনাও কম হয় তাহলে আমি সংসদের সামনে ল্যাংটো হয়ে...
পর্যন্ত বলেই মামা পানচুনে মাখানো রক্তিম জিহ্বাটা আর্ধেক বের করে কামড় বসালো।
হাটুর বয়সী ভাগ্নের সামনে এমন অশালীন বাক্য প্রয়োগে লজ্জিত বোধ করলেন বুঝি। এমতাবস্থায় তার টুকটুকে লাল জিব্বার মত মুখাবয়বটাও রক্তবর্ণ ধারণ করলো, না না ভুল বললাম মিস্টেক। ল্যাংটো পায়ে ধরনা দেব। এই কথা বলতে দেরি বিল পাশ হতে বিলম্ব নেই। সবি তোদের জন্য, আমি তো কেবল এলাকার উন্নয়ন চাই। কী ভেবেছিস মহানগর পড়ে থাকি দেখে এলাকার কথা ফুড়ুৎ? মন তো সব সময় এখানেই পড়ে থাকেরে’।
সেদিন দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো, এলাকার উন্নয়ন নিয়ে। কীভাবে এলাকাকে আরও পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। অনেক ভাবনা চিন্তার পর সাধারণ সম্পাদকসহ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, যে সাইবেরিয়া থেকে কাক আমদানি করে এলাকায় ছাড়বো। সেই কাক সব ময়লা আবর্জনা খেয়ে এলাকা একেবারে ফকফকা করে রাখবে।
বছর কয়েক আগে পত্রিকায় নিউজ হয়েছিল না? ছয়টি কাক দিয়ে ফ্রান্সের একটি থিম পার্কের ময়লা অপসারণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই সেরকম- মানুষের বদলে কাক পরিষ্কার করবে ময়লা। ফ্রান্স তো কেবল পার্ক পরিষ্কার করাবে কাক দিয়ে। আমরা পরিষ্কার করাব গোটা এলাকা।
ফ্রান্সের লোকেরা তো বোকার বাক্স। তোরা কাক দিয়ে পার্ক পরিচ্ছন্ন রাখতে পারিস অথচ দেশ পরিষ্কার করাতে পারিস না। সতেরশো তে ঐ এক ফরাসি বিপ্লব ঘটিয়েই বুঝি সব উদ্ধার করে ফেলেছে এমন এক ভাব।
যদিও কাজটা অনেক ব্যয়বহুল, সংসদে এটা নিয়ে অনেক ঝামেলাও করবে। বাজেট দিতে চাইবে না হয়তো। কোনো ব্যাপার না। গতবার তো কেবল ল্যাংটো পায়ে সংসদে ধরনা দেওয়ার কথা বলেছি। এবার না হয় ন্যাংটো গায়ে ধরনার হাঁক দেব। তোদের জন্য সব করতে পারি সব। এই ল্যাংটো হয়ে ধরনা দেওয়া তো কোন বিষয়ই না। সাধারণ সম্পাদক আমায় আশ্বাস দিয়েছেন, উনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ দৃষ্টিপাতের অনুরোধ করবেন। সংসদে আমার পক্ষে আওয়াজও তুলবেন। এসব কিছুর জন্য হয়তো কয়েকটা বান্ডিল উনার খেদমতে পাঠাতে হবে।
বাজেটটা পাস হলেই সাইবেরিয়ান কাকের কাকা কোলাহলে আমাদের এলাকা শ্রুতিমধুর হয়ে উঠবে। সব আবর্জনা সাফ হয়ে সিঙ্গাপুর রুপ ধারণ করবে আমাদের জেলা। তখন দেশ দেশান্তর হতে সেলিব্রেটিরা এসে সংবাদ সম্মেলনে বলে উঠবে, মনে হয় না বাংলাদেশের কোনো জেলায় এসেছি। আশপাশে তাকালেই সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর ভাব। চিন্তা করছি আমার নেক্সট সিনেমার শুটিং এখানেই করবো। সিঙ্গাপুর যাওয়ার খরচটা বেঁচে যাবে, হা হা....
তখন পত্র-পত্রিকায় বড় বড় হেডিং হবে, জনপ্রিয় নায়ক বলে গিয়েছেন, এটা কোনো জেলা নয় আস্ত সিঙ্গাপুর। তারপর আমার এই চিন্তাকে সসম্মানে সমর্থন দিয়ে প্রতিটা জেলায়, সাইবেরিয়া থেকে কাক আমদানী করা হবে। ধীরে ধীরে গোটা দেশ হয়ে উঠবে সিঙ্গাপুর। তারপর কাকা রবে ভরে উঠবে আমার সোনার বাংলাদেশ। হয়তো আমার এই চিন্তার জন্য দেশীয় সর্বদেশীয় সম্মাননা পেতে পারি। বলা যায় না নতুন কোনো ক্যাটাগরিতে এই বুদ্ধিমত্তার জন্য নোবেল বা অস্কারও দিতে পারে আমায়। কি ভাগ্নে কেমন মাথা আমার, জব্বর বুদ্ধি না বল?
তোর মনে এখন প্রশ্ন আসতে পারে। আমাদের দেশে এত কাক থাকতে বিদেশি কাক দিয়ে কেন এই কাজ করাতে হবে? উত্তরটা খুবই সহজ। স্বদেশী লোক দিয়ে যেমন একটি দেশের সর্ব কার্য হয় না তদ্রুপ দেশীয় কাক দিয়েও কি দেশ পরিচ্ছন্ন সম্ভব? আর আমাদের দেশের কাকগুলো কি আবর্জনা পরিষ্কার করতে জানে? উল্টো হারামিরা ময়লার পর্বত বানায়।
আমি খুব ইতস্তত করে বলেই ফেললাম, কিন্তু মামা সাধারণ মানুষ তো হাঙ্গামা করছে, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি নিয়ে।
মুহূর্তেই মামার দিবা উজ্জ্বল মুখখানায় বিদঘুটে আমাবস্যা ছেয়ে গেল। মুখাবয়বের মত সুশ্রী ভাষা ভুলে চলিত বাংলায় বলতে শুরু করলো, করুক হাঙ্গামা। এই শালারা বুঝে কী? খালি খাওন আর খাওন, খাওন ছাড়া কিছু বুঝে? দাম একটু বাড়ছে তো কি হইছে? সব তো এদের জন্যই করতেছি। দেশের উন্নয়ন হইলে তো এই সালাগোরি লাভ। আমি তো আর কয়দিন পরই গিয়া বেগম পাড়ায় উঠমু। আমার জন্য অপেক্ষা করতাছে কত ক্ষুধার্ত বাঘিনী!
প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।
কেএসকে/এএসএম