চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানা এলাকায় ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে যান জাকেরুল। সেখানে সখের মোবাইল ফোনটি হারান তিনি। শুধু জাকেরুল একা না ওইদিন অন্তত এক হাজার ব্যক্তি মাহফিলে গিয়ে মোবাইল হারানোর জিডি করেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে জিডি তদন্তে নামে ঢাকার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ১২ সাইবার টিম। দীর্ঘ চেষ্টার পর কক্সবাজারের পাহাড়তলীতে উদ্ধার হয় হারানো ফোনটি। প্রায় সাড়ে ৬ মাস পর ফোনটি পেয়ে উচ্ছ্বসিত জাকেরুল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ, সিলেট ও যশোরে মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে মোবাইল হারানোর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়েক ডজন মোবাইল ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে পুলিশের এই ইউনিটটি।
রাজধানীর একটি সুপার হোস্টেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রউফ। নিজের কর্মক্ষেত্র থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে কাজ করতে করতে একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হন। এর মাঝেই টেবিলে থাকা তার স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা মডেলের ফোনটি উধাও হয়ে যায়। কিন্তু এরপর সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখলেন তাতে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না রউফ ও তার সহকর্মীরা।
তিনি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখলেন, মাত্র ৮ বছরের একটি শিশু চুপি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর প্রথমে গেটে থাকা দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীর মোবাইলটি নেয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় তলায় গিয়ে রউফের রুমে প্রবেশ করে ওই শিশু। তারপর টেবিলে থাকা রউফের লাখ টাকা দামের মোবাইলটি নিয়ে বের হয়ে যায়। এই ঘটনায় রাজধানীর কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তী একজনের মাধ্যমে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ১২ এর শরণাপন্ন হন। এরপর হবিগঞ্জের একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ফোনটি উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেয় এপিবিএন ১২।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর পূর্বাচলে এপিবিএন ১২ এর অস্থায়ী সদর দপ্তরে উদ্ধার হওয়া দেড় শতাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধার শেষে ভুক্তভোগীদের ফিরিয়ে দেন অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল। এ সময় জিডি তদন্তের মাধ্যমে হারানো মোবাইল মোবাইল উদ্ধারে সফলতা অর্জন করায় এপিবিনের এএসআই মো. রুবেল ও পুলিশ সদস্য মাওলানা ওমর ফারুককে পুরস্কৃত করা হয়।
উদ্ধার হওয়া মোবাইল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত ডিআইজি ইকবাল বলেন, পুরোনো মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি যদি মোবাইল হারিয়ে যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি শেষে এপিবিএন ১২ এর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার ও ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করলে মোবাইল উদ্ধারে সহযোগিতা করা হবে।
তিনি বলেন, ১২ এপিবিএন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধার করে থাকে। আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে হারানো মোবাইল ফোনের জিডি সংগ্রহ করে থাকি। বিশেষ করে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনসহ দেশের বিভিন্ন থানা থেকে হারানো মোবাইল ফোনের জিডি সংগ্রহ পূর্বক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।
অনেকটা নীরবে সাধারণ মানুষের হারানো মোবাইল উদ্ধার করে যাচ্ছেন ১২ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) সাইফুর রহমান। তার নেতৃত্বে গত ৬ মাসে দেশের বিভিন্ন থানায় নথিভুক্ত সাড়ে ৫ হাজার জিডি তদন্ত করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অন্তত এক হাজার মোবাইল ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন মানুষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি পেশাগত বিভিন্ন জিনিস মোবাইলে রাখেন। এই বিষয়টি মাথায় রেখে নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনায় হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধার, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ভুলে অন্য নাম্বারে টাকা গেলে ও হ্যাক হওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি উদ্ধারে কাজ করছি।
এই সংক্রান্ত সেবা পেতে ভুক্তভোগীরা এপিবিএন ১২ এর মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ (013200194018) ও ফেসবুক পেজে জিডি কপি ১২ এপিবিএনের সাইবার টিম সহযোগিতায় কাজ করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ১২ এপিবিএনের উপ-অধিনায়ক পুলিশ সুপার (এসপি) নাঈমা সুলতানাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
টিটি/এসএনআর/এমএস