আট সন্তান থাকতেও ৯০ বছরের বৃদ্ধার জায়গা খোলা আকাশের নিচে

5 days ago 17

একে একে জন্ম দিয়েছেন ৮টি সন্তান। আদর-যত্নে বড় করেছেন তাদের। শেষ বয়সে সেই ৮ সন্তানের কাছে চেয়েছিলেন একটু আশ্রয় ও দুবেলা খাবার। কিন্তু বৃদ্ধা মা এখন তাদের বোঝা। তিন বিঘা জমি মেয়েদের নামে লিখে দেওয়াই কাল হলো তার। স্বামীর ৪০ বিঘা সম্পত্তি থাকার পরও তার কপালে জুটছে না শান্তিতে ঘুমানোর জায়গা আর দুবেলা ঠিকমতো খাবার।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরা ইউপির জগৎনগর গ্রামের মৃত মহাতাবের স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৯০)। বয়সের ভারে ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। তিন ছেলে ও ৫ মেয়ের মা তিনি। বড় ছেলে মতাহার মাস্টার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অপর দুই ছেলে মশিউর ও আতোয়ার কৃষি কাজ করেন। আর মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ৮ বছর আগে স্বামী মারা যায়। 

স্বামীর রেখে যাওয়া ৪০ বিঘা সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ছেলে-মেয়ের মাঝে বাঁধে বিরোধ। এরপর আর কেউ মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে চায় না। তাই তো সম্পত্তির জন্য বৃদ্ধা মায়ের স্থান হলো খোলা আকাশের নিচে।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে এক নজর দেখতে গ্রামবাসীর ঢল নামে। সংবাদ পেয়ে জগৎনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম খোলা আকাশের নিচে একটি বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন। কথা বলার চেষ্টা করলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছেন। কিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারেন না। 

বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের কষ্ট দেখে রাতে মশার হাত থেকে রক্ষার জন্য গ্রামবাসী মশারি টানিয়ে দেন। কিন্তু পরিবারের লোকজনের কেউ এক নজর দেখতেও আসেনি। 

ছেলেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গেলে সংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দেন। তবে ঘটনার এক ঘণ্টা পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে মশিউর নামের এক ছেলে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে খোলা মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার বাড়িতে জায়গা দেন।

গ্রামবাসী বলেন, সুফিয়া বেগমের স্বামীর ৪০ বিঘার প্রায় সব জমিই ছেলেরা দখলে রাখে। এ ছাড়া কিছু জমি ছেলেরা আগেই তার বাবার কাছ থেকে লিখে নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম তার নামে থাকা তিন বিঘা জমি পাঁচ মেয়েকে লিখে দেন। এরপর ছেলেদের কাছে শত্রু হয়ে যান মা। তারপর থেকেই মায়ের খোঁজ নেন না ছেলেরা। পরবর্তীতে একই গ্রামের ছোট মেয়ে আঙ্গুর বেগম ও জামাই ফিরোজ হোসেনের বাড়িতে জায়গা হয় তার।

জামাই ফিরোজ হোসেন বলেন, শাশুড়ি আমার কাছেই ছিল। কোনো ছেলে তার খোঁজ-খবর নেয় না। অসুস্থ হওয়ার খবর শোনার পরও ছেলেরা মাকে দেখতে আসেনি। তাই রাগ করে তার মেয়ে আঙ্গুর বেগম আমার শাশুড়িকে ফাঁকা মাঠে ফেলে আসে।

মথুরাপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আহসান হাবিব লিটন ও বদলগাছী থানার উপপরিদর্শক নিহার চন্দ্র বলেন, ঘটনা জানার পর এখানে এসেছি। তার ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেছি। তার ছেলে মশিউরের কাছে আছে বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগম। মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নিলে ছেলে-মেয়েদের বিরুদ্ধে ভরণ-পোষণ আইনে মামলা করা হবে।

পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি।

Read Entire Article