ই-কমার্স খাতের বিকাশ ও এ খাত শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে প্রস্তুত করা হচ্ছিল ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৫। ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়ন ও কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা কমিটির সবশেষ সভায় আইনটি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ, আইনটি এখন আর হচ্ছে না।
সভায় ডিজিটাল ক্ষেত্রে ভোক্তাদের প্রতারণা-হয়রানি কমাতে নতুন আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠন না করে বিদ্যমান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ প্রয়োজনীয় সংশোধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত আইন বিষয়ে অংশীজনদের আরও বিস্তারিত পর্যালোচনা করে মতামত দিতে বলা হয়েছে।
সভায় নতুন আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে দ্বিমত ছিল। যে কারণে এখন আইনটি স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তীসময়ে আরও বিস্তারিত পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী
এর আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে অনলাইন বিক্রেতাকে দুই বছরের কারাদণ্ড, অনাদায়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রেখে আইনটির প্রস্তাবিত খসড়া করা হয়। নির্ধারিত সময়ে পণ্য বা সেবা সরবরাহ না করলে মূল্যের কয়েক গুণ জরিমানা আরোপ করা এবং নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও বড় অংকের জরিমানার বিধান ছিল খসড়া আইনে। অন্যদিকে, অধ্যাদেশ পাসের পর ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ নামে একটা আলাদা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা হতো।
গত ৭ সেপ্টেম্বর খসড়া আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দেওয়ার জন্য কমিটির ওই বৈঠক হয়। সভাপতি ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। এছাড়া বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন প্রধান অতিথি, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান, উপ-সচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলীসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে ফুডপান্ডা, মাস্টারকার্ডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
- আরও পড়ুন
- অনিয়ম ঠেকাতে নতুন আইনের আওতায় আসছে ই-কমার্স
- অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে প্রতারণা করলে জেল, আসছে নতুন অধ্যাদেশ
- ই-কমার্সে প্রতারণা: কেনাকাটায় আস্থা সংকটে মানুষ
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা ডিজিটাল বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার চেয়ে বর্তমানে যে সব আইন ও কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তাদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদ দেন। এরপর সরকারের পক্ষের কয়েকজন প্রতিনিধি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ডিজিটাল বাণিজ্য সংক্রান্ত অভিযোগ শুনানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে বলেন। সব বিষয় পর্যালোচনা করে আইনটি স্থগিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ আইন হলে ডিজিটাল ক্ষেত্রে প্রতারণা অনেক কমে যেত। কর্তৃপক্ষ বিশেষ মনোযোগ দিয়ে অনলাইন কেনাবেচা বিষয়ক সমস্যাগুলো দূর করতে পারতো।- ডিজিটাল বাণিজ্যবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সভায় নতুন আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে দ্বিমত ছিল। যে কারণে এখন আইনটি স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তীসময়ে আরও বিস্তারিত পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।’
দেশে ই-কমার্স, ডিজিটাল বাণিজ্যকেন্দ্রিক প্রতারণার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। যথাযথ কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকার কারণে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে বেশি। আইনটি হলে তার আওতায় একটি কর্তৃপক্ষ গঠিত হতো, যার মাধ্যমে অনলাইন কেনাবেচা বিষয়ক সমস্যাগুলো দূর করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিজিটাল বাণিজ্যবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ আইন হলে ডিজিটাল ক্ষেত্রে প্রতারণা অনেক কমে যেত। কর্তৃপক্ষ বিশেষ মনোযোগ দিয়ে অনলাইন কেনাবেচা বিষয়ক সমস্যাগুলো দূর করতে পারতো।’
ডিজিটাল কোম্পানি বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা দিয়ে পণ্য পাননি- এমন অভিযোগ নতুন নয়। পণ্য না পেয়ে টাকা ফেরতের দাবিতে ২০২১-২২ সময়ে মিছিল, সমাবেশ ও রাস্তা অবরোধ পর্যন্ত করেন তারা। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই ওই সময় শুরু হয় এ আইন প্রণয়নের কাজ। ২০২৪ সালের মে মাসে তৎকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়া অনুমোদন হয়েছিল।
প্রস্তাবিত আইনে ই-কমার্স খাতের বিকাশ ও এ খাত শৃঙ্খলার জন্য একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করার কথা ছিল। ডিজিটাল বাণিজ্যের প্রসার, শৃঙ্খলা রক্ষা, বাণিজ্য-বিরোধ নিষ্পত্তি ও অপরাধ প্রতিরোধের তদারকির কথা ছিল ওই কর্তৃপক্ষের।
প্রস্তাবিত আইনে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, আমদানিনিষিদ্ধ পণ্য ও সেবা কেনাবেচা এবং সংরক্ষণ হয় কি না, কোনো ওষুধপণ্যের মোড়কে সঠিক ব্যবহারবিধি, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছাড়া অনলাইনে বিক্রি হয় কি না, অসত্য ও অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন বা বিক্রি প্রস্তাব দিয়ে ক্রেতা ও গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা হয় কি না—এসব দেখার কাজ ছিল কর্তৃপক্ষের।
ওই কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিয়ে দেশে ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নিয়ম ছিল প্রস্তাবিত আইনে। আইনটি আটকে গিয়ে গ্রাহকদের এসব থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এনএইচ/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস