আত্মগোপনে সভাপতি, স্থবির পড়ে আছে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স
* কার্যালয়ে বিরাজ করছে অচলাবস্থা* ফি বাড়ায় সদস্যপদ নবায়ন করছেন না ব্যবসায়ীরা* কমেছে সদস্য সংখ্যা ময়মনসিংহে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম চালিকাশক্তি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় শিল্প, বাণিজ্য ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা ও অচলাবস্থা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চেম্বারের সভাপতির আত্মগোপন, ব্যবস্থাপনা ঝিমিয়ে পড়াসহ নানা কারণে চেম্বারের কার্যক্রম এখন প্রায় থমকে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারাদেশের মতো ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থাপনা, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতেও আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। পরিবেশ শান্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। কার্যালয়ে দু’একজন এলেও প্রায় সময়ই থাকে সুনসান নীরব। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে চেম্বারের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম আত্মগোপনে। তবে মেয়াদ শেষ না হওয়ায় তিনি এখনো চেম্বারের
* কার্যালয়ে বিরাজ করছে অচলাবস্থা
* ফি বাড়ায় সদস্যপদ নবায়ন করছেন না ব্যবসায়ীরা
* কমেছে সদস্য সংখ্যা
ময়মনসিংহে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম চালিকাশক্তি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় শিল্প, বাণিজ্য ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা ও অচলাবস্থা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চেম্বারের সভাপতির আত্মগোপন, ব্যবস্থাপনা ঝিমিয়ে পড়াসহ নানা কারণে চেম্বারের কার্যক্রম এখন প্রায় থমকে গেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারাদেশের মতো ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থাপনা, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতেও আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। পরিবেশ শান্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। কার্যালয়ে দু’একজন এলেও প্রায় সময়ই থাকে সুনসান নীরব।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে চেম্বারের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম আত্মগোপনে। তবে মেয়াদ শেষ না হওয়ায় তিনি এখনো চেম্বারের সভাপতি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চেম্বারে একটি সভাও করা হয়নি। চেম্বারের পুরাতন অনেক সদস্য সদস্যপদ নবায়নও করছেন না। ফলে কমছে সদস্য সংখ্যা। একইসঙ্গে সরকার নতুন সদস্য ভর্তি ও নবায়ন ফি বৃদ্ধি করেছে। এতে নতুন সদস্য হওয়ার আগ্রহ হারানোর পাশাপাশি অনেকে নবায়ন করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
জানা যায়, ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর তিন থেকে চারবার ২ বছর মেয়াদি নির্বাচন হয়েছে। পরে সিলেকশনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছেন সভাপতিরা। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রথম শ্রেণির সদস্য ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। অনেকেই প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। সবশেষ সভাপতি পদে ৬ বছর যাবৎ নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমিনুল হক শামীম। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। চেম্বারের সহসভাপতি শংকর সাহা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তপন কুমার ভট্টাচার্য, অফিস সহায়ক ২ জন, কম্পিউটার অপারেটর ১ জন ও একজন ঝাড়ুদার রয়েছেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চেম্বারের সদস্য ৪০০ থাকলেও এখন তা কমে হয়েছে প্রায় ২৫০ জন।
আরও পড়ুন-
আবর্জনায় ভরা ফেনী বিসিক শিল্পনগরী, কর্তৃপক্ষ বলছে বাজেট কম
৪২ কোটি টাকার বিসিকে কারখানা চলে ৩টি, বাকি সব আগাছা
‘উদ্যোক্তাদের বৈষম্যহীন ঋণ দিলে জেলায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাড়বে’
সরেজমিনে নগরীর জুবলিঘাট এলাকায় অবস্থিত ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে কয়েকদিন গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ে সুনসান নীরবতা। সুবল বিশ্বাস নামের একজন অফিস সহায়ক দায়িত্ব পালন করছেন। সহসভাপতি শংকর সাহা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তপন কুমার ভট্টাচার্যকে পাওয়া যায়নি। তবে একদিন পাওয়া গেছে সদস্যপদ নবায়ন করতে আসা চেম্বারের এক সদস্যের প্রতিনিধি আব্দুল খালেদ নামের একজনকে। নবায়ন ফি বাড়ানোসহ ব্যবসা বাণিজ্যে সুবিধাজনক সময় পার করতে না পারায় ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই অফিস সহায়কের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় কার্যালয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছিল। এগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আলমারিটাও চেম্বার থেকে নিয়ে গেছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ বর্তমানে ঝিমিয়ে পড়া চেম্বারে সহসভাপতি শংকর সাহা মাঝেমধ্যে আসেন। আগে বছরে একবার চেম্বারের সভা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে একটি সভাও হয়নি। আগে নবায়ন ফি ছিল ১ হাজার, এখন বেড়ে ৫ হাজার হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চেম্বারে নতুন সদস্য বাড়ছে না। একইসঙ্গে পুরাতন সদস্যদের অনেকে নবায়ন করছেন না। চেম্বারের সভাপতির নাম কাগজে- কলমে থাকলেও বাস্তবে চেয়ার ফাঁকা। থমকে যাওয়া চেম্বারের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন, সেজন্য প্রয়োজন নির্বাচন।
এদিকে চেম্বারের অবস্থা কিংবা কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতেই রাজি নন সহসভাপতি শংকর সাহা। তার সঙ্গে কয়েকদিন যোগাযোগ করলেও বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। শংকর সাহা বার বার জানিয়েছেন, তিনি চেম্বার নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথাই বলবেন না। চেম্বারের সভাপতি আমিনুল হক শামীম আড়ালে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না শংকর সাহা। ফলে চেম্বারের সভাপতির অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দেওয়া সমীচীন হবে না।
একপর্যায়ে শংকর সাহা বলেন, ‘চেম্বারের সদস্য সংখ্যা কমছে। আমরা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি।’
একই ধরনের অবস্থায় রয়েছেন চেম্বারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তপন কুমার ভট্টাচার্য। মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে চেম্বারের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তপন কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘সরাসরি চেম্বারে না এলে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না।’ এ কথার পরদিন চেম্বারে গেলে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও তপন কুমার ভট্টাচার্যকে পাওয়া যায়নি।
তবে অফিস সহায়ক সুবল বিশ্বাস বলেন, ‘চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ৩০ বছর যাবৎ চাকরি করছি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই নেতৃত্বে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। সভাপতি না থাকলেও মাঝেমধ্যে সহসভাপতি আসেন। আমরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছি।’
এসময় তিনি কার্যালয় ঘুরিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চেম্বারে দেওয়া আগুনের ক্ষতচিহ্ন দেখান। বলেন, ‘সুন্দর পরিপাটি থাকা চেম্বারের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করেই ক্ষান্ত হয়নি। পাশাপাশি লুটপাট করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর চেম্বারে নতুন নেতৃত্ব আসবে বলে জানতে পেরেছি।’
চেম্বারের সদস্যরা মনে করেন, নতুন নেতৃত্ব ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা না এলে ময়মনসিংহের ব্যবসায়িক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে একটি গতিশীল ও কার্যকর চেম্বার এখন সময়ের দাবি। নতুন কমিটির মাধ্যমে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের কার্যক্রম গতিশীল হবে। একইসঙ্গে সরকারি উদ্যোগে সদস্য নবায়ন ফি কমানো প্রয়োজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ উদ্যোক্তা ও সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাধারণ সদস্যরা শুধু নামেই সদস্য। বাস্তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃত্বে স্থবিরতা ব্যবসা বান্ধব পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সারা-মাহিদ (আমদানি-রপ্তানি) এজেন্সির ঠিকাদার ও চেম্বারের সদস্য মো. শামসুল আলম বলেন, চেম্বারের কার্যক্রম থেমে গেলে শুধু সদস্যরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, বরং স্থানীয় বিনিয়োগের গতি কমে যায়। আমি ২০০৮ সাল থেকে সদস্য। বর্তমানে চেম্বারের নেতৃত্বে ব্যাপক টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। গত ৬ বছর যাবৎ কোনো সভা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। কারণ সদস্য হিসেবে এই বছরগুলোতে আমন্ত্রণ পাইনি।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসক হিসেবে ময়মনসিংহে এসেছি। চেম্বারের সভাপতি আছে, নাকি নেই- তাও আমি জানি না। কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে কি না খোঁজ নেওয়া হবে।
এফএ/জেআইএম
What's Your Reaction?