বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)। তরুণ প্রজন্মের নতুন রাজনৈতিক দল ঘিরে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। নতুন এ দলের কাছে তাদের নানান চাহিদা থাকলেও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জীবনযাপনের প্রত্যাশা যেন মুখ্য হয়ে উঠেছে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে নতুন এই রাজনৈতিক দলের। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের বাইরেও অনুষ্ঠানস্থলে এসেছেন অনেক সাধারণ মানুষ। জাগো নিউজের কাছে তারা এসব প্রত্যাশার কথা জানান।
দিনাজপুর থেকে এসেছেন শেখ সুমন আলী। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ যেসব অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমাদের সেই বঞ্চিত অধিকার এই তরুণ প্রজন্ম ফিরিয়ে দেবে। আমরা যেন সুন্দরভাবে জীবনযাপন করে বেঁচে থাকতে পারি- তরুণ প্রজন্মের কাছে এটাই চাওয়া।
অ্যডভোকেট মিনহাজুল হকও এসেছেন দিনাজপুর থেকে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমি এসেছি কালের সাক্ষী হতে। আমি আওয়ামী লীগের গঠন দেখিনি, বিএনপির গঠন দেখিনি, জাতীয় পার্টির গঠন দেখিনি। কিন্তু আজ যে নতুন পার্টি গঠন হচ্ছে সেই পার্টি গঠনে কালের সাক্ষী হতে এখানে এসেছি। যারা দল গঠন করছেন তারা দেশ ও মানুষের জন্য ডেডিকেটেড হবেন। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবেন- এটাই চাওয়া।
লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা থেকে আসা নুর জামান বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের আগে তারা ছাত্র ও তরুণদের গুলি করে হত্যা করে, তারা গণতন্ত্র বিনাশ করে দিতে চেয়েছিল। আমাদের আশা ছাত্র ও তরুণদের এই দল ভবিষ্যতে অবশ্যই ভালো কাজ করবে। আমার চাওয়া তারা এই দেশটা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে।
চট্টগ্রামের রাউজান থাকে এসেছেন মো. মহিউদ্দিন জিলানী। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, তরুণ সমাজ যে স্পিরিট নিয়ে আমাদের জুলাইয়ের বিপ্লব ঘটিয়েছে স্পিরিটটা ছিল শুধুমাত্র একটা ফ্যসিস্ট এবং স্বৈরতন্ত্রকে বিদায় করা। এই পরিস্থিতিতে আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, যে আকাঙ্ক্ষার মধ্যমে আমাদের দেশের এবং দেশের অর্থনীতি, আইনগত কাঠামো, দলীয় শৃঙ্খলা এবং মানুষের মধ্যে যে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বৈষম্য- এই সমস্যাগুলো যখন সামনে চলে এসেছে তখন এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে কল্যাণকর রাষ্ট্র গটনের জন্য একটা বন্দোবস্ত করবে এটাই তাদের কাছে আমাদের চাওয়া। এ ক্ষেত্রে তারা চেষ্টা করবে যেন পূর্ববর্তী দলগুলোর মতো যেন তারা ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার না হয়। মানুষের কাছে যেন তারা বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়, হিংস্র হয়ে না ওঠে এটায় আমাদের প্রত্যশা।
- আরও পড়ুন
- কানায় কানায় পূর্ণ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা
- নতুন দলের নাম ঘোষণা করবে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবার
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে এই তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দলের দরকার ছিল। বিএনপি, আওয়ামী লীগ সবাইকেই দেখলাম আমরা। সব দলের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া আমরা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারি, চলতে পারি। তরুণ প্রজন্মের কাছে আমাদের চাওয়া আমরা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারি, সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে পারি।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, দল ঘোষণার জন্য বড় মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। আছে ভিআইপি ব্যক্তিদের জন্য আসনের ব্যবস্থা।
নতুন দল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও সমর্থকদের খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে দেখা গেছে। এসময় তারা ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা-জনতা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আসা নেতাকর্মীদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকাজুড়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে।
প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সারাদেশ থেকে ছাত্র-জনতা আসতে শুরু করেছেন। আশা করছি সফলভাবে অনুষ্ঠান শেষ করতে পারবো।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সূত্র জানিয়েছে, তারুণ্যনির্ভর নতুন এ রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদিব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, প্রধান সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হিসেবে হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক পদে সারজিস আলম, দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাতের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নতুন এই রাজনৈতিক দলে সব মিলিয়ে প্রথমে ১৫১ জনের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে। পরে পর্যায়ক্রমে কমিটির আকার বাড়ানো হবে।
কেআর/কেএসআর/এএসএম