আত্মিক শক্তির উৎস মোনাজাত

2 hours ago 5

মোনাজাত মানে আল্লাহর সঙ্গে একান্তে কথা বলা। আর যে কাজে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়, সে কাজে কখনো কখনো বাহ্যিকভাবে ব্যর্থ হলেও এর ফলাফল আল্লাহতায়ালা অন্যভাবে দিয়ে থাকেন। হয়তো আমাদের কোনো গুনাহ মোচন করে দেন কিংবা কোনো বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেন। তাই মোনাজাত আমাদের সঙ্গী হলে আমরা কখনোই ব্যর্থ হব না। মোনাজাত একটি ইবাদাতও। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’

মোনাজাতের আদব: মোনাজাত কবুল হওয়ার জন্য কিছু আদব ও শর্ত রয়েছে। যেগুলো খেয়াল না করলে আমাদের মোনাজাত হয়তো কিছু প্রার্থনা-বাক্য হিসেবেই থেকে যাবে। আল্লাহতায়ালার কাছে কবুল হওয়ার মতো মোনাজাত কখনোই হবে না। তাই কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, শুরুতে যাবতীয় দুনিয়াবি সব চিন্তা থেকে নিজেকে খালি করে পবিত্র মনে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা। দুই হাত তুলে প্রথমেই আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করা ও নবী (সা.)-এর ওপর দুরুদ পড়া। এ ক্ষেত্রে দুরুদে ইব্রাহিম পড়াই উত্তম। নিজের সব গুনাহ অপরাধ ও কমজোরি আল্লাহর কাছে স্বীকার করা এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব বর্ণনা করা প্রথমে নিজের মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন এবং সবল মুসলমানের জন্য ব্যাপকভাবে দোয়া করা। তারপর নিজের প্রয়োজন অত্যন্ত কাকুতি-মিনতির সঙ্গে আল্লাহর কাছে তুলে ধরা। আল্লাহতায়ালাকে তার শ্রেষ্ঠ নামগুলো দিয়ে ডাকা। যেমন—রহমান, রাহিম, গাফুর, শাকুর। নিজের দোয়া কবুলের জন্যও দোয়া করা। সর্বশেষ ‘আমিন’ বলে এবং নবী (সা.)-এর ওপর দুরুদ পড়ে মোনাজাত সম্পন্ন করা।

মোনাজাতের সময়: মোনাজাতের জন্য নির্ধারিত কোনো সময় না থাকলেও কিছু কিছু সময়ে মোনাজাত করা উত্তম। কারণ তখন কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন—আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়। এটি একটি দোয়া কবুলের বিশেষ সময়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ (আবু দাউদ: ৫২১)। সিজদায় থাকা অবস্থায়ও দোয়া কবুল হয়। এটি দোয়া কবুলের উত্তম সময়। কারণ এ সময় বান্দা আল্লাহতায়ালার অতি নিকটে থাকে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকে সিজদার সময়, সুতরাং তখন তোমরা বেশি বেশি দোয়া করো।’ (মুসলিম: ৪৮২)। রাতের মধ্যভাগে এবং রাতের শেষাংশের দোয়া আল্লাহতায়ালার অনেক প্রিয়। কারণ তখন আকাশ থেকে আহ্বান করা হয়—‘আছে কি কোনো প্রার্থনাকারী যার প্রার্থনা কবুল করা হবে! আছে কি কোনো প্রয়োজনগ্রস্ত যার প্রয়োজন পূর্ণ করা হবে! আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত যার বিপদ দূর করা হবে!’ এভাবে আহ্বান করা হয় ফজর পর্যন্ত। তখন যেই মুসলিম ব্যক্তি কোনো দোয়া করে, আল্লাহতায়ালা তা কবুল করেন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)। জুমার দিন ইমাম সাহেব মিম্বারে বসার পর থেকে নামাজ দাঁড়ানো পর্যন্ত সময় এবং আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়গুলোতে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা খুবই বেশি।

আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার কোনো দোয়াই বিফলে যায় না। তাই দোয়া কবুল হয়নি বলে অস্থির হওয়ার কোনো কারণ নেই। হতে পারে আমি যেজন্য দোয়া করেছি সেটা হয়নি। কিন্তু আমার এই দোয়ার মাধ্যমে হয়তো আল্লাহতায়ালা আমাকে বড় কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন কিংবা আমার কোনো গুনাহ মুছে দিয়েছেন। আর এর কোনোটিই না হলে আখিরাতে অবশ্যই আমরা প্রত্যেকটি মোনাজাতের বিনিময় পাব। তাই মুমিনের কর্তব্য সর্বদা প্রভুর দরবারে মোনাজাত বা প্রার্থনা করে যাওয়া।

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক

Read Entire Article