আধা কিলোমিটার ড্রেনের অভাবে ডুবে আছে ৪ হাজার বিঘার ফসল

1 month ago 12

টানা তিন মাসের ভারী বৃষ্টিতে যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারানপুর ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজার বিঘা কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ১০ হাজার পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ মাত্র আধা কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করলেই ওই পানি নিষ্কাশন সম্ভব।

পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছরই এই উপজেলায় কৃষিখাতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় কৃষকদের। এবার ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের চাঁদপাড়া, গোয়াতুলি, বড় খানপুর, কেসমত খানপুর, বাদেখানপুর, নারানপুর, বন্দলীতলা, বাটিকামকলি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে সোনাবেলে ও ফাসতলা মাঠ অবস্থিত। বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত এই সোনাবেলে ও ফাঁসতলা মাঠ জুড়ে থৈ থৈ করছে বৃষ্টির পানি। মাঠের পর মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধান, কলা, পাট, ড্রাগন ও পেয়ারা বাগানসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, বিগত ৩০ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে এই ফসলি জমিগুলো পানির নিচে ডুবে থাকে। এতে তাদের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, এখানে আমরা ধান, ভুট্টা, পাট চাষ করি। কিন্তু ফসল তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রতি বছরই পানিতে সব তলিয়ে যায়। এভাবে বছরের পর বছর আমাদের চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ছে।

আরেক কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, মাঠে পানি না থাকলে আমরা বছরে তিন থেকে চার বার ফসল ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু এখন এই জমিগুলো এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। এতে শুধু কৃষকদেরই ক্ষতি হচ্ছে না বরং এই অঞ্চলের সামগ্রিক কৃষিখাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয় কৃষক তরিকুল ইসলাম ডাবলু।

তিনি বলেন, প্রতি বছর জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ মাত্র আধা কিলোমিটারের একটি ড্রেন নির্মাণ করে এই পানি চৌগাছার কপোতাক্ষ নদে ফেলতে পারলে কৃষকদের এই কষ্ট লাঘব হয়ে যেত।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৩০ বছর আগে একজন স্থানীয় চেয়ারম্যান ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আর কেউ তাদের কথা ভাবেনি। দ্রুত একটি ড্রেন নির্মাণ করে চার হাজার বিঘা ফসলি জমির পানি স্থায়ীভাবে নিষ্কাশনের জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নারায়নপুর ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এই ইউনিয়নের ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান হয়। এ বছর প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে এবং ৫০০ হেক্টর জমি এখনও জলাবদ্ধ আছে। এই সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে কাজ করছে।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা ইসলাম জানান, স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কৃষকরা একটি আবেদন দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।

মিলন রহমান/এফএ/এমএস

Read Entire Article