পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সাম্প্রদায়িকতার ধোয়া তুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উস্কে দিয়ে উপমহাদেশে তাদের আধিপত্য কায়েম করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ভারতের উদ্দেশে রিজভী বলেন, সাম্প্রদায়িকতার ধোয়া তুলে আপনারা ভারতকে যেমন বিভাজন করছেন, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে গণতন্ত্রের যে একটি ঐতিহ্য ছিল- এটাকেও ভুলূণ্ঠিত করছেন। আর সেই সাম্প্রদায়িকতার ধোয়া তুলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উস্কে দিয়ে আপনারা চাচ্ছেন উপমহাদেশে আপনাদের আধিপত্য কায়েম করতে। আপনাদের এই বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের কারণে, আপনাদের এই হিংসাশ্রয়ী মনোভাবের কারণে, আপনাদের এই ধরনের অপরকে ঘৃণা করার মনোভাবের কারণে আজকে নেপাল আপনাদের সাথে নেই, ভুটান আপনাদের সাথে নেই, শ্রীলংকা আপনাদের সাথে নেই, মালদ্বীপ আপনাদের সাথে নেই, পাকিস্তান তো নেই, বাংলাদেশও আপনাদের সাথে নেই। শুধুমাত্র আপনাদের অহংকার এবং একের পর এক শোষণের যে মনোভাব, সেই কারণে আপনাদের এই অবস্থা।
তিনি বলেন, আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি। এই জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে, ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানীর মধ্য দিয়ে। ১৮ কোটি, ১৯ কোটি মানুষের এই দেশ; এই দেশকে আপনারা চোখ রাঙিয়ে, ভয় দেখিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। হঠাৎ করে আপনাদের কী হলো যে, পার্শ্ববর্তী দেশের বিরুদ্ধে আপনারা উঠেপড়ে লেগেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে নেমেছেন। ৫ আগস্টের আগে এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল ঘৃণিত একটি সরকার। এরা ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজ দেশের সন্তানদেরকে হত্যা করতে দ্বিধা করতো না, এরা নিজ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষদেরকে চিরদিনের জন্য নিরুদ্দেশ করতে দ্বিধা করতো না। এরা ক্রসফায়ার দিয়ে নদীর ধারে, খালের ধারে মানুষদেরকে নির্দ্বিধায় হত্যা করতো। সেই হাসিনা সরকার আপনাদের এত প্রিয় ছিল কেন? কারণ, আপনাদের সাহসে আপনাদের উস্কানিতে শেখ হাসিনা যা ইচ্ছা তাই করে গেছে এই দেশে। উনার ভোটের দরকার হতো না; শেখ হাসিনার অধীনে যে ভোটগুলো হয়েছে সেগুলো হয়েছে ভোটারবিহীন। যে ভোটের এক একটা নাম আছে 'ভোটারশূন্য ভোট', 'মিডনাইট ভোট' আরও অনেক কিছু।
ভারতের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আপনারা মনে করছেন পেঁয়াজ বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষ তরকারিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারবে না। আপনারা রসুন,আদা সয়াবিন তেল বন্ধ করে দিলে, আমরা এগুলো আর রান্নায় ব্যবহার করতে পারবো না। এটা তো আপনারা দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আপনারা গরু রপ্তানি পাঁচ- ছয় বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গরুর খামার, ছাগলের খামার গড়ে তুলেছে। এক কোরবানি ঈদেই এক কোটি ২০ লাখ গবাদি পশু জবাই হয়।
প্রতিবেশি রাষ্ট্রের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, আপনারা ভুলে যাবেন না বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত শ্রমপ্রিয়। পেঁয়াজ রসুন আদা তারা নিজেরাই উৎপাদন করতে জানে।আপনারা কী মনে করেন আপনারাই শুধু একটি দেশ আছে পৃথিবীতে। আর কি দেশ নেই পৃথিবীতে- যাদের কাছ থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারব, যাদের কাছ থেকে আমরা রসূন তেল আমদানি করতে পারবে। সেই সব দেশ কি নেই? আপনারা মনে করেছেন এগুলো বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা কাহিল হবে। অবস্থা কাহিল হয়েছে আপনাদের। আপনাদের নিউমার্কেটের কোনো দোকান চলে না, আপনাদের মার্কেটগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাংলাদেশের মানুষ ওই কলকাতায় গিয়ে ডলার খরচ করে তারা সেখানে কেনাকাটা করে চিকিৎসা করতে যায় হাসপাতালে। হাসপাতাল আর চলবে না। আপনারা বন্ধ করে দিয়ে মনে করেছেন বাংলাদেশের মানুষ অস্থির হয়ে গেছে, বাংলাদেশের মানুষ আনন্দিত। প্রয়োজন হলে থাইল্যান্ড যাবে, মালয়েশিয়া যাবে, ইন্দোনেশিয়া যাবে কিংবা অন্য দেশে যাবে। আপনাদের মতো হিংসাশ্রয়ী যারা আমাদেরকে ঘৃণা পোষণ করেন, সেই দেশে মানুষ যেতে চায় না। কারণ রক্তমূল্যে স্বাধীনতা কেনা এই জাতি। এই জাতিকে আপনি ভয় দেখিয়ে, আপনাদের নতজানু করবেন- সেই জাতি বাংলাদেশ নয়।
তিনি বলেন, রিপাবলিক বাংলা বলেছে, চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ হিসেবে দাবি করা হয়েছে, আরো কত মিথ্যা অপপ্রচার চলছে। আমরা বলছি, একটি স্বাধীন-সার্বজনীন দেশে আপনারা দাবি করলে আমরাও আমাদের নবাবের এলাকা ওই বাংলা বিহার উড়িষ্যা আমরা দাবি করবো, যেটা আমি আগেও বলেছি। এটা তো আমাদের ন্যায্য পাওনা। এই কথাগুলো আমরা বলতে চাই না। অনেক সংগ্রাম, অনেক আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম- এই উপমহাদেশে আমরা একসাথে করেছি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, ছাত্রদলের সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর আউয়াল, ছাত্রদল নেতা রাজু আহমেদ প্রমুখ।