আনু ভাই থেকে ঢাকাই সিনেমার মুকুটহীন নবাব

9 hours ago 4

‘বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার মহান অধিপতি, তোমার শেষ উপদেশ আমি ভুলিনি জনাব…’ - বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এ সংলাপটি এক অনন্য প্রতীক। এই এক সংলাপেই যাকে চেনেন বাংলাদেশের কোটি দর্শক, তিনি আর কেউ নন, চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেন।

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ-দৌলার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত চরিত্রে তার অভিনয় এমন গভীর ছাপ ফেলেছিল যে দর্শক তাকে ডাকতেন ‘মুকুটহীন নবাব’ বলে। আজ সেই কালজয়ী অভিনেতার ৯৪তম জন্মদিন।

আরও পড়ুন
এবারও ঢাকা ক্যাপিটালসের মালিক শাকিব খান
সেই সিনেমা হলে এখন সানাই বাজে, বসে বিয়ের আসর

১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সারুলিয়া গ্রামে জন্ম আনোয়ার হোসেনের। পিতা নজির হোসেন, মাতা সাঈদা খাতুনের তৃতীয় সন্তান তিনি। স্কুলজীবন থেকেই থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষকে মুগ্ধ করেন। আসকার ইবনে শাইখের ‘পদক্ষেপ’ নাটক দিয়ে তার অভিনয়ে হাতেখড়ি।

১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক পাসের পর ভর্তি হন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। পরে ১৯৫৭ সালে ঢাকায় আসেন বড় পরিসরে অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে।

রূপালী পর্দায় তার অভিষেক ঘটে ১৯৫৮ সালে ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। শুরুতে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করলেও অল্প সময়েই তিনি হয়ে ওঠেন শক্তিশালী চরিত্রাভিনেতা। তার অসাধারণ সংলাপপ্রবাহ, চোখের অভিব্যক্তি ও কণ্ঠস্বরের গভীরতা তাঁকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা করেছে।

১৯৬৭ সালে খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় তার অভিনয় তাকে পৌঁছে দেয় কিংবদন্তির মর্যাদায়। সেই ছবিতেই তিনি পান উপাধি ‘মুকুটহীন সম্রাট’।

৫২ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আনোয়ার হোসেন অভিনয় করেছেন প্রায় ৫০০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে। কখনও মুক্তিযোদ্ধা, কখনও ছাত্রনেতা, কখনও আবার দুঃখী পিতা হয়ে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন জীবনের গভীর সত্য। তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে তোমার আমার, সূর্যস্নান, কাচের দেয়াল, বন্ধন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, অপরাজেয়, সাত ভাই চম্পা, জীবন থেকে নেয়া, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, রংবাজ, ধীরে বহে মেঘনা, লাঠিয়াল, পালঙ্ক, রূপালী সৈকতে, নয়নমনি, কুয়াশা, নাগরদোলা প্রভৃতি অন্যতম।

‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে সহ-অভিনেতার ভূমিকায় ১৯৭৮ সালে অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৮৫ সালে পান একুশে পদক। ২০১০ সালে সম্মানিত হন আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে।

বাংলা সিনেমাকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন এক অন্য উচ্চতায়। কলকাতা, মুম্বাই বা লাহোরের সিনেমার প্রতিযোগিতায় থেকেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কেবল।

২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা।

এলআইএ/এএসএম

Read Entire Article