আন্তর্জাতিক কল বানানো হতো দেশীয় কল, ভিওআইপি সরঞ্জামসহ গ্রেফতার ২

4 months ago 49

রাজধানীর নয়াপল্টন ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির ৩০ হাজার সিম কার্ডসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এছাড়া অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে টেলিযোগাযোগের ব্যবসা করায় মো. সাইফুল ইসলাম ও আব্দুর রহিম রাজকে (৩৮) নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (৯ জুন) রাতে খিলগাঁও ও সোমবার (১০ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পল্টনের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব।

পল্টনের অভিযানে ৫১২ পোর্টের তিনটি সিমবক্স, ২৫৬ পোর্টের পাঁচটি সিমবক্স, ১২৮ পোর্টের পাঁচটি সিমবক্স, ১৬ পোর্টের তিনটি সিমবক্স, পাঁচটি ওয়ারলেস রাউটার, ছয়টি সুইচ, ২৫টি জিএসএম অ্যান্টিনা, তিনটি মিনি পিসি, তিনটি মিডিয়া কনভার্টার, একটি এসএসডি হার্ড ডিস্ক, একটি ল্যাপটপ, একটি সিপিও, দুটি পাওয়ার ক্যাবল, দুটি ইউএসবি ক্যাবল, দুটি চার্জার, দুটি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার সিমকার্ড, একটি মাইক্রোটিক রাউটার, পাঁচটি পেনড্রাইভ ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

আন্তর্জাতিক কল বানানো হতো দেশীয় কল, ভিওআইপি সরঞ্জামসহ গ্রেফতার ২

অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন চক্র অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল জানতে পারে, কতিপয় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী ঢাকা মহানগরীর নয়াপল্টন এলাকায় একটি বাড়িতে বিটিআরসির অনুমোদনবিহীন অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে টেলিযোগাযোগের ব্যবসা করে আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সকালে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামসহ সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব জানায়, খিলগাঁও থেকে গ্রেফতার রহিম তিন বছর ধরে অবৈধভাবে ভিওআইপি সরঞ্জাম দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ ব্যবসা করছে। এতে করে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক কল বানানো হতো দেশীয় কল, ভিওআইপি সরঞ্জামসহ গ্রেফতার ২

গ্রেফতার সাইফুলের বিষয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, রাজধানীর গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটে সাইফুলের একটি মোবাইল দোকান ছিল। তার দোকানের কর্মচারী ওয়ালির মাধ্যমে সে এ ব্যবসায় জড়ায়। দোকানেই তারা চার-পাঁচ মাস ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে। পরে যে টাকা আয় হয় সেই টাকা দিয়ে তারা আরও যন্ত্রপাতি কিনে এই বাসায় ব্যবসা পরিচালনা করে। এছাড়া ওয়ালি দুবাইতে গিয়ে আন্তর্জাতিক একটি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। সেখানে বসেই তিনি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। আর দোকান মালিক সাইফুল ওয়ালির কর্মচারী বা সহযোগী হিসেবে দেশে বসে এ ব্যবসা পরিচালনা করেন।

আন্তর্জাতিক কল বানানো হতো দেশীয় কল, ভিওআইপি সরঞ্জামসহ গ্রেফতার ২

তিনি বলেন, জার্মানি প্রবাসী জামানের সহযোগিতায় ব্যবসাটি চালাতো সাইফুল। জামানের মাধ্যমে একটি বিশেষ সফটওয়্যার সংগ্রহ করে। সাধারণত বৈধভাবে আন্তর্জাতিক গেটওয়ের কলগুলো গ্রাহকের কাছে এলে মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে সরকার সঠিক রাজস্ব পেতো। কিন্তু এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করায় আন্তর্জাতিক কলগুলো সাধারণ কলে পরিণত হয়। ফলে দেশের অভ্যন্তরে লোকাল কলে পরিণত হতো। ফলে আন্তর্জাতিক কল এলেও সরকার বিশাল পরিমাণ রাজস্ব হারাতো।

যেভাবে ৩০ হাজার সিম সংগ্রহ করেন সাইফুল

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও বলেন, এসব সিম বিভিন্ন সময় হাতবদল হয়। সিম সচল রাখার জন্য মেসেজ পাঠানো হতো। বিটিআরসির তৎপরতার কারণে সিম বন্ধ করে দেওয়া হতো। ফলে নানা কৌশলে তারা সিমগুলো সচল রাখতো। এছাড়া সিমগুলো বেশি টাকায় সংগ্রহ করতো। অজ্ঞাতসারে সিম কিনতে যাওয়া ব্যক্তিদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে একাধিক সিম রেজিস্ট্রেশন করে নেওয়া হতো। এসব সিম বেশি দামে কিনে ব্যবহার করতেন সাইফুল।

টিটি/বিএ/জেআইএম

Read Entire Article