জুলাই আন্দোলনকারীদের হত্যার পর লাশ গুমের নির্দেশ দিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে দেওয়া সাক্ষীর জবানবন্দিতে তিনি একথা বলেন।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৪৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
জবানবন্দিতে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, জুলাই বিপ্লবের সময় চালানো শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। ওই প্রতিবেদনের মতে, এ গণহত্যা চালানোর জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ জন্য প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজ বাসায় কোর কমিটির সভা করতেন। বৈঠকে পুলিশ-র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নিতেন। সেখানেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছাত্রদের ওপরে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগের উপায় নিয়ে আলোচনা করতেন তারা।
- আরও পড়ুন:
- হত্যা বন্ধে উদ্যোগ না নেওয়া ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়ের আওতাভুক্ত
- ১৫ বছরের দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে
- গণজাগরণ মঞ্চের নামে শাহবাগে মব কালচারের সৃষ্টি করা হয়
সেসব বৈঠকে শেখ হাসিনার বরাতে তারা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের ওপর যেন মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এছাড়া প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমে আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশের ঘোষণা দেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এমনকি আন্দোলনকারীদের হত্যা করে লাশ গুমের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে যে, শেখ হাসিনা ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরাসরি নির্দেশে গণহত্যা চালানো হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের ওপর কমান্ড রেসপনসিবিলিটির দায় পড়ে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বরাতে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবে প্রায় ১৪০০ আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে প্রধানত জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু ১৫ বছর ধরে চলা ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার অবর্ণনীয় জুলুম নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়মিত আলোচনার পাশাপাশি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রতিবছর প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট প্রতিবেদনেও শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বর্ণনা রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে হওয়া তিনটি ভুয়া নির্বাচনের কথাও প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিউম্যান রাইটস। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সংসদেও এ তিনটি নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রস্তাব পাস করা হয়।
জবানবন্দির পর মাহমুদুর রহমানকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান, সহিদুল ইসলামসহ অন্যরা।
এফএইচ/এসএনআর/এএসএম