বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আন্দোলনকারীদের হামলায় পুরোপুরি তছনছ হয়ে গেছে। সোমবার শেষ বিকেলে প্রায় শতাধিক আন্দোলনকারী ঢুকে হামলা চালায় ক্লাবটিতে। এ সময় ক্লাবের প্রতিটি রুমের আসবাবপত্র ভেঙে গুড়োঁ করে দেয়া হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকে রোড টু ঢাকা মার্চে সাড়া দিয়ে লাখ লাখ মানুষ শাহবাগ এবং গণভবনের দিকে এগিয়ে গেছে দুপুরের পর পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান সদ্য সাবেক হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই পুরো ঢাকা শহরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। গণভবন, সংসদ ভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মানুষ ঢুকে পড়ে।
আওয়ামীলগ নেতা-কর্মীদের বাসভবন, অনেক সরকারী স্থাপনায় হামলা চালায় আন্দোলনকারী বিক্ষব্ধ জনতা। তেমনই একটি হামলা পরিচালিত হয় ধানমন্ডিস্থ আবহানী ক্লাবে।
হামলার সময় ক্লাবে কয়েকজন কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। ভয়ে তারা সরে যায়। সরেজমিনে আজ দুপুরে আবাহনী ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ক্লাব যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি স্থাপনা। প্রতিটি কক্ষে ধ্বংসের চিহ্ন।
হামলার সময় উপস্থিত থাকা এক কর্মচারী জাগোনিউজকে বলেন, ‘মূল ফটকে তালা লাগানো ছিল। হুট করেই কয়েকশ হামলাকারীরা এসে তালা খুলে দিতে বলে। পরে তারা নিজেরাই ফটকের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। ক্লাবের ভেতরের প্রতিটি রুম ছিল তালাবদ্ধ। শতাধিক ব্যক্তি এসব রুমের তালা ভেঙে ভেতরে ভাঙচুর চালায়। লুটপাট করে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। কাগজপত্র একসঙ্গে করে পুড়িয়ে দিয়েছে। কিছু আসবাবপত্রও নিয়ে গেছে। কিছু বাইরে পড়ে আছে। ক্লাব প্রাঙ্গনে অবস্থিত শেখ কামালের মুরালে ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। যদিও পুরোপুরি ভাঙেনি।’
ক্লাবের ওই কর্মচারী বলেন, ‘হামলাকারীরা ট্রফিগুলো নিয়ে গেছে। ক্লাব ফুটবল-ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলায় ঘরোয়া-আন্তর্জাতিক আসরে যত ট্রফি এবং মেডেল জয় করেছেম, সবকিছু নিয়ে গেছে। চিহ্নও নাই।’
সরেজমিনে দেখা গেছে আবাহনীর ক্যাবিনেটগুলো সব খালি। কোনা ট্রফি নেই। ক্লাবের সামনে রাস্তার ওপর আগুন দেয়া হয়েছিলো। সেগুলোর চিহ্ন রয়ে গেছে আজও। এমনকি ক্লাবের সামনে ফুটপাথে অনেক রক্তের দাগ দেখা গেছে আজও। বোঝা গেছে, ভাঙচুরের সময় কেউ আহত হয়েছিলেন হয়তো। তাদেরই কারো হয়তো রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছিলো।
আবহানীর মূল অফিস আগে যে জায়গায় ছিল, সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছিলো আবাহনী ও শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স। যে কারণে মাঠের দক্ষিণ দিকে এনে একটি অস্থায়ী কার্যালয় তৈরি করা হয়। সেখানেই মূলত হামলা চালানো হয়। নির্মাণাধীন ক্রীড়া কমপ্লেক্সে ঢুকেও হামলা চালিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
যে ক’জন কর্মচারী তখন সেখানে ছিলো, তারা দ্রুত নিরাপদ জায়গায় সরে পড়ে। এরপরই হামলাকারীরা সব তছনছ করে দিয়ে যায়। জানতে চাওয়া হয়, হামলার সময় বা পরে ক্লাবের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না? ওই কর্মচারী বলেন, ‘না, কোনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। দুপুর ১২টার দিকে আজ ক্লাবের কয়েকজন মধ্যম পর্যায়ের কর্মচারী এসে ধ্বংসযজ্ঞের ছবি তুলে নিয়ে যান। সেই ছবি আবার সবাইকে দেখানো হচ্ছিলো।’
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন শেখ কামাল।
আরআই/আইএইচএস/